বানারহাট: পুলিশের নাকের ডগায় সিন্ডিকেট (Syndicate) বানিয়ে চলছে বেআইনি ট্রাক পার্কিং জোন। ভুটানে যাওয়া-আসার পথে সমস্ত ট্রাককে পার্কিং জোনে (parking zone) ঢোকানো একপ্রকার অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও ট্রাক দাঁড়াতে না চাইলেও দিতে হচ্ছে ফি। একপ্রকার জোর করেই ট্রাকমালিক ও ড্রাইভারদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে সিন্ডিকেট। সবমিলিয়ে প্রতিদিন কালেকশন হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও এই কারবারে জড়িয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ।
বানারহাট থানার অধীন চামুর্চি ফাঁড়ির ওসি আদিল লিম্বু অবশ্য টাকা তোলার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘এই পার্কিং-এর বিষয়ে কিছুদিন আগেই খোঁজখবর করা হয়েছিল। যদি কোনও ট্রাকচালক পার্কিংয়ে নিজে থেকে থাকতে চায় তাহলে দাঁড়াবে। কাউকে জোর করা যাবে না।’ তাঁর যুক্তি, পার্কিং জোন না থাকলে রাস্তায় দীর্ঘ ট্রাকের লাইন লেগে যায়। তাই সেখানে গাড়ি দাঁড় করানো হয়।
বানারহাট থানা এলাকায় এমন দুটি পার্কিং জোন চালু রয়েছে। একটি রিয়াবাড়ি চা বাগান যাওয়ার রাস্তা পেরিয়ে কাঁঠালগুড়ি চা বাগানের জমিতে, দ্বিতীয়টি চামুর্চি ফাঁড়ির গা-ঘেঁষে। প্রতিদিন এই এলাকা দিয়ে প্রায় ৩০০-৪০০ ট্রাক চলে। চামুর্চি ফাঁড়ির ঠিক পাশেই স্থানীয় কিছু যুবক খাতা হাতে রীতিমতো ট্রাকের নম্বর লিখে প্রতি ট্রাক থেকে অন্তত ২০০ টাকা করে আদায় করে। ওই সিন্ডিকেটের হাতে টাকা দিলে তবেই ভুটানে যাওয়ার ‘লাইসেন্স’ পাওয়া যায়। এছাড়া ভুটান থেকে মাল নিয়ে ফেরার পথেও আবার কাঁঠালগুড়ি চা বাগানের পার্কিংয়ে দিতে হয় ২০০ টাকা ‘টোল ফি’।
কাঁঠালগুড়ি পার্কিংয়ে বহু লোক রাস্তার পাশে ক্যাম্প বানিয়ে ড্রপগেট লাগিয়ে লাঠি হাতে কড়া পাহারা দেয় সবসময়। যদি কোনও ট্রাক টাকা না দিয়ে বেরিয়ে যায়, তবে পরবর্তীতে সেই ট্রাক এই এলাকায় ঢোকার ছাড়পত্র পায় না। বছরের পর বছর ধরে পুলিশের নাকের ডগায় পার্কিং চললেও, তা বন্ধের নামমাত্র নেই। বিজেপির যুব মোর্চার বানারহাট ব্লক সভাপতি সঞ্জয় চৌধুরীর অভিযোগ, শাসকদলের বহু নেতা জড়িয়ে রয়েছে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে।
সূত্রের খবর, রাজ্য স্তরে কয়েকজন শ্রমিক নেতার কাছেও পৌঁছে যায় বখরা। শাসকদলের কোনও সভা হলে সেখানে কর্মী-সমর্থকদের যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে এই সিন্ডিকেটের ওপর।
এক ট্রাক মালিক বলছেন, ‘যতবার এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাবে ততবারই টাকা দিতে হয়। এটা দিনের পর দিন সহ্য করা যায় না।’ তাঁর অভিযোগ, পুরো কারবারই চলছে পুলিশের নজরদারিতে। তবে ট্রাক (Truck) মালিকপক্ষের সংগঠন ও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা কেউই প্রকাশ্যে এনিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না।
চামুর্চি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল নেত্রী সংগীতা কামির সাফাই, ‘আমি প্রধান হওয়ার আগে থেকেই এসব চলছে। এখন এখানে কী বিষয় আছে সেগুলো খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
বানারহাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুমন্তি মুন্ডার কাছে ফোন করা হলে তিনি সামনাসামনি গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। সুমন্তির কথায়, ‘এসব ফোনে নয়, অফিসে এসে বলতে হবে।’