রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: এমনিতেই কর্মীসংকটের (Staff Shortage) জেরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (North Bengal Medical College) ঠিকমতো সাফাই কাজ করা যাচ্ছে না। তার উপরে একাধিক আধিকারিক নিজের আবাসনে সাফাইকর্মীকে দিয়ে বিভিন্ন কাজকর্ম করাচ্ছেন। ফলে রোগী পরিষেবায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে অন্যায়ভাবে কিছু আধিকারিক মেডিকেলের কাজে নিযুক্ত কর্মীদের দিয়ে নিজের আবাসনের কাজ করাচ্ছেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপই করা হচ্ছে না। মেডিকেল সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিকের বক্তব্য, ‘মেডিকেলে কাজের জন্য নেওয়া কর্মী কেন কারও ঘরের কাজ করবেন? এমনটা করা অপরাধ। আমি খোঁজ নিচ্ছি। এসব হয়ে থাকলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’
মেডিকেলে দীর্ঘদিন ধরে এজেন্সির মাধ্যমে ২৮৫ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী কাজ করছেন। বিভিন্ন সময়ে এজেন্সি বদল হলেও কর্মীদের কোনও বদল হয় না। এই কর্মীদের হাউস কিপিং অ্যান্ড স্ক্যাভেঞ্জিং অর্থাৎ সাফাইকর্মী হিসাবে নিয়োগ করা হলেও সাফাইয়ের বদলে সিংহভাগ কর্মীকে দিয়ে বিভিন্ন বিভাগে অফিসের কাজকর্ম করানো হচ্ছে। ওয়ার্ড মাস্টারের ঘর সামাল দেওয়া, ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি, অক্সিজেন সরবরাহ বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগেই অস্থায়ী কর্মীরা অফিসের বিভিন্ন কাজ করছেন। এজেন্সির দাবি, ২৮৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনকেও সাফাইয়ের কাজের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় নতুন তথ্য উঠে আসছে যে, বেশ কিছু অস্থায়ী কর্মীকে আধিকারিকরা নিজেদের আবাসনে নিয়ে বিভিন্ন কাজ করাচ্ছেন। অন্তত ১৫-২০ জন এভাবে মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল দুটি অফিসের আধিকারিকদের আবাসনে সাফসুতরো করা থেকে শুরু করে বাজার করা, কিছু ক্ষেত্রে রান্না করা, বাসন মাজা এবং ওই আধিকারিকের জন্য মাঝেমধ্যে আবাসন থেকে অফিসে খাবার এনে দিচ্ছেন। বছরের পর বছর এভাবে চলছে, অথচ কেউ কিছুই জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এজেন্সির এক কর্তা বলেন, ‘আমরা কীভাবে গোটা হাসপাতাল পরিষ্কার রাখব? বেশিরভাগ কর্মীকে দিয়ে অফিসে ফাইলপত্রের কাজ করানো হচ্ছে। সুপার অফিস, অ্যাকাউন্টস অফিস থেকে শুরু করে ডেপুটি সুপার, সহকারী সুপারের অফিসে একজন, দুজন করে কর্মীকে নিয়ে রেখেছে। তাছাড়াও বেশ কিছু কর্মীকে আধিকারিকরা তাঁদের বাড়িতে একরকম রাধঁুনি হিসেবে কাজ করাচ্ছেন। তাহলে হাসপাতালের পরিষেবা কীভাবে দেওয়া সম্ভব?’
আরও অভিযোগ, যে কর্মীরা আধিকারিকদের বাড়িতে অথবা অফিসে কাজ করে দিচ্ছেন, তাঁদের অনেক বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সমস্ত সমস্যা মেটানোর দাবি জোরালো হয়েছে।