উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পটনা ও বেঙ্গালুরুতে বিরোধী জোটের বৈঠকে সিপিএমের উপস্থিতিতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের নিচুতলায়। দলের একটা বড় অংশ মেনে নিতে পারেনি ‘ইন্ডিয়া’ জোট। কারণ একটাই—তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে যাওয়া। যা নেতৃত্বের কাছে খানিকটা উদ্বেগের। সে উদ্বেগের আঁচ পৌঁছেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও। সিপিএম সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর্যালোচনা সভায় মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে ‘ইন্ডিয়া’। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বিজেপিতে চলে-যাওয়া বামেদের ভোট পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফিরলেও সেই ভোট গুলো ফের লোকসভায় পরতে পারে বিজেপির বাক্সে। যদিও এই পরিস্থিতিতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছে সিপিএম। দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, জোটে না গেলে পার্টি সম্পর্কে বিজেপি-বিরোধী পরিসরে কী বার্তা যেত? তা ছাড়া সংখ্যালঘুদের মধ্যেও ধারণা খারাপ হত। কোন ভাবনা থেকে সর্বভারতীয় স্তরে বৈঠকে যেতে হচ্ছে, তা দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে ব্যাখ্যা করা হবে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করতে হয়েছে সিপিএমকে। পরবর্তীতে রাজ্যের বিভিন্ন পুর নির্বাচন বা উপনির্বাচনে ভোট বেড়েছে বামেদের। শুধু তা-ই নয়, প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অনেক এলাকাতেই তিন নম্বরে চলে যাচ্ছিল। সাগরদিঘি উপনির্বাচনেও জয়ী হয়েছে বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। এই জয় দেখে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, তৃণমূলের বিরোধী হিসাবে বাম-কংগ্রেসের ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হচ্ছে। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটে তৃতীয় স্থানে থাকলেও গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট ১৬ শতাংশের মতো বেড়েছে। সিপিএমের অনেকের আশঙ্কা, ‘ইন্ডিয়া’ সেই সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে।
এবার তৃণমূলের একুশের মঞ্চেও সিপিএম কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি শব্দও ব্যয় করেনি তৃণমূলের দুই প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। চুপ ছিলেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। আর এতেও চাপ বাড়িয়েছে রাজ্য সিপিএমের। অনেকে এই ভয়ও পাচ্ছেন যে, এর ফলে লোকসভায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের রাস্তা প্রশস্ত হয়ে গেল না তো? যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সমঝোতা হবে না!’’
আগামী ২৫-২৬ জুলাই সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত পরবর্তী ‘পার্টি চিঠি’তে বিরোধী পরিসরের ‘ইন্ডিয়া’ বড় জায়গা নিতে পারে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বাংলায় আগামী নির্বাচনে লড়াইয়ের স্ট্রাটেজি কী হবে।
সীতারাম ইয়েচুরির ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়েও বারবার প্রশ্ন উঠেছে বঙ্গ সিপিএমের অন্দরে। ‘ইন্ডিয়া’ পর্বের পর সীতারামকে নিয়েও অনেকে নানা কথা বলতে শুরু করেছেন। যদিও সিপিএম সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, কেরলে যেমন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএমের লড়াই, তেমনই বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়বে তাঁদের দল। সমাজমাধ্যমে দলের নীচুতলার কর্মীরা সমালোচনার ঝড় তুলছেন। লেখা হচ্ছে যে, ‘‘যারা গ্রামেগঞ্জে তৃণমূলের হাতে মার খেল, এখন তাদেরই তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে বলা হবে?’’
এই পরিস্থিতিতে ফাঁপরে পড়েছে সিপিএম। মুচকি হাসছে তৃণমূল। বাংলার শাসকদল মনে করছে, বিজেপি-বিরোধী লড়াইকে শক্তিশালী করতে হলে সিপিএমকে তৃণমূলের ‘উগ্র বিরোধিতা’ ছাড়তে হবে। কারণ, বাংলায় বিজেপিকে রুখতে পারে একমাত্র তৃণমূলই। ২০২১-এর ভোট তা প্রমাণ করে দিয়েছে। সেই কারণেই দলের কর্মী-সমর্থকদের পরিস্থিতির ‘বাধ্যবাধকতা’ বোঝাতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার ভাবনাচিন্তাও চলছে দলীয় স্তরে।