প্রসেনজিৎ সাহা, দিনহাটা: সদ্যই চারিদিকে ঘটা করে নারী দিবস পালিত হয়েছে। সর্বত্রই নারীদের জয়জয়কার। মন ভালো হবেই হবে। উলটোদিকে কিন্তু তাঁদের নিয়ে কোচবিহারের (Cooch Behar) একটি তথ্য মন খুব খারাপ করে দেবে। দিনহাটা মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত ফেব্রুয়ারিতে এই হাসপাতালে ৪৯৭ জন সন্তান প্রসব করেছেন। এঁদের মধ্যে ২২৪ জন নাবালিকা রয়েছে। এদের বয়স ১৩–১৬ বছর। সংশ্লিষ্ট মহল তো বটেই, কী কারণে এমনটা হচ্ছে তা ভেবে প্রশাসনও উদ্বিগ্ন।
দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের (Dinhata Sub Divisional Hospital) স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিসি বর্মা বলেন, ‘নাবালিকারা মা হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রসবকালীন জটিলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রসবকালীন মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকছে। এছাড়া, কম ওজন হওয়ার কারণে সদ্যোজাতরা নানা সমস্যায় ভুগছে।’ হাসপাতাল সুপার রণজিৎ মণ্ডলের কথায়, ‘গত কয়েক মাস ধরেই আমাদের চিকিৎসকরা এই প্রবণতা লক্ষ করছিলেন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে টিনএজ প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত আলাদা রেজিস্টার চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তারপরই গোটা ছবি আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়। সবকিছু বিস্তারিতভাবে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, এই সমস্যার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা সচেতনতামূলক ভূমিকা নিয়েছেন।’ সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমেই সমস্যা মিটবে বলে কোচবিহার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুকান্ত বিশ্বাসও মনে করছেন। তাঁর কথায়, ‘এই সমস্যার বিষয়ে নিয়মিতভাবে বিএমওএইচদের নিয়ে বৈঠক চলছে। পাশাপাশি, আশাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূল স্তরে প্রচারও চালানো হচ্ছে।’
কী কারণে এই সমস্যা? দেখা যাচ্ছে, দিনহাটার (Dinhata) বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে কাজে যাচ্ছেন। পরিবার নিয়ে সেখানে গেলেও অনেকেই তার আগে পরিবারের নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। করোনার কোপে পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধির কারণেও অনেক পরিবারে নাবালিকাদের বিয়ের প্রবণতা বেড়েছে। পুঁটিমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে সদ্য মা হওয়া এমন দুই নাবালিকার বক্তব্যে এই যন্ত্রণা পরিষ্কার, ‘আমাদের দুজনের বাবাই পরিযায়ী শ্রমিক। পরিবারে আমরা তিন বোন। টাকাপয়সার সমস্যার কারণে বাবারা আগেভাগেই আমাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।’ সমস্যা মেটাতে আশাকর্মীদের নিয়ে আলোচনায় বসার পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো হবে বলে দিনহাটা মহকুমা শাসক বিধু শেখর জানিয়েছেন।