পারমিতা রায়, শিলিগুড়ি: সন্তান মারা গেলে মানুষ যেমন তাকে আকাশের দিকে মুখ করে শুইয়ে রেখে কবর দেয়, শাবকরা মারা গেলে হাতিরাও (Elephant) ঠিক তেমনটাই করে। দিল্লি নিবাসী আকাশদীপ রায় ও জলদাপাড়া অভয়াণ্যের (Jaldapara Wildlife Sanctuary) ডিএফও পারভিন কাশোয়ানের যৌথ গবেষণায় এই তথ্যই উঠে এসেছে। আকাশদীপ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গের বক্সা, জলদাপাড়া, গরুমারা জঙ্গলগুলিতে ঘুরে ঘুরে হাতিদের বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন। অন্যদিকে, জঙ্গলের সঙ্গেই পারভিনের কেরিয়ার জুড়ে। ফলে এ বিষয়ে নিবিড়ভাবে যুক্ত হতে তাঁরও বেশি সময় লাগেনি। দুজনের এই যৌথ গবেষণা ‘জার্নাল অফ দ্য থ্রেটেনড টাক্সা’ নামক একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তারপর থেকেই গোটা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা।
মানুষ আর হাতির মধ্যে বহু মিল। গবেষকরা বহুদিন ধরেই সে সব নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। বুদ্ধি, দলগত অবস্থান, স্বজনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ, সেই তালিকা অনেকটাই বড়। কিন্তু সন্তান মারা গেলে মানুষের মতো হাতিও যে তাকে আকাশের দিকে মুখ করে শুইয়ে রেখে কবর দেয় তা কে-ই বা জানত? জঙ্গল ও জঙ্গল সংলগ্ন চা বাগানগুলির পাশে থাকা বড় বড় গর্তে আকাশদীপরা এই হস্তীশাবকদের মৃতদেহ দেখেছেন। যেভাবে ওই শাবকদের কবর দেওয়া হয়েছে, আকাশদীপরা দেখেছেন তা একদম মানুষের মতো করেই করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয় আকাশদীপদের গবেষণা পত্রিকার মাধ্যমে সবার সামনে উঠে আসায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। আকাশদীপ দিল্লিতে পড়াশোনা করেছেন। ছোটবলা থেকেই পশুপাখিদের প্রতি গভীর টান। এনিয়েই তিনি পরবর্তীতে গবেষণার সিদ্ধান্ত নেন। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের ডিএফও-কে পাশে পাওয়ায় জোরকদমে দুজনের দৌড় শুরু। উল্লেখযোগ্য বিষয় বলতে, পারভিনও দিল্লির বাসিন্দা। ফলে এ সংক্রান্ত গবেষণা আরও জোরদার হয়েছে।
আকাশদীপের কথায়, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমরা হাতিদের নানা রকম ব্যবহার খতিয়ে দেখছিলাম। তা করতে গিয়েও তাদের এই বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। সন্তান মারা গেলে মানুষ যেভাবে তাকে কবর দেয়, হাতিও একইরকম কাজ করে দেখে আমরা রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এই পৃথিবী কতটা আশ্চর্যের সেটাই এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।’ মাথা নেড়ে পারভিনও তাতে সায় দেন।