উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বালেশ্বরে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে করমণ্ডল দুর্ঘটনার জন্য রেলকেই দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বা কবচ চালু থাকলে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তা নিয়ে রবিবার মুখ খুললেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। বৈষ্ণবের দাবি এই দুর্ঘটনার সঙ্গে ‘কবচ’ প্রযুক্তির কোনও যোগ নেই। ‘কবচ’ প্রযুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছিলেন, সেটার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওডিশার বালেশ্বরের কাছে বাহানগায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আপ শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট হামসফর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯৫ জন যাত্রী। আহত হয়েছেন ১,১০০ জনের বেশি। দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ১৬০ যাত্রীর। শনিবার সকালেই বালেশ্বরের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন যে ‘কবচ’ প্রযুক্তি থাকলে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। যদিও রবিবার রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব বলেন, ‘এই দুর্ঘটনার সঙ্গে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বা কবচের(যে প্রযুক্তি থাকলে দুটি ট্রেনের ধাক্কা হবে না, একই লাইনে দুটি ট্রেন নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে চলে এলে প্রযুক্তিই ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে দেবে) কোনও সম্পর্ক নেই। গতকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কারণ বলেছেন, সেটা মোটেও আসল বিষয় নয়। উনি যেমন বুঝেছেন, সেরকম বলেছেন।’
তাহলে দুর্ঘটনার আসল কারণ কী? এই প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রীর দাবি, ইলেট্রনিক ইন্টারলকিংয়ের পরিবর্তনের কারণে সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই ইন্টারলকিং হল যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনও রুট সুরক্ষিত বলে নিশ্চিত না হলে কোনও ট্রেনকে সিগন্যাল দেওয়া হবে না। রেলমন্ত্রীর কথায়, ‘এটা একটি আলাদা বিষয়। পয়েন্ট মেশিন এবং ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং সংক্রান্ত বিষয়। ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিংয়ের সময় যে পরিবর্তন হয়েছিল, সেটার কারণে এই দুর্ঘটনা হয়েছে। কে সেই কাজটা করেছে এবং কীভাবে সেই কাজটা হয়েছে, সেটা উপযুক্ত তদন্তের পরে খুঁজে বের করা হবে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বাহানগা বাজার স্টেশন পেরিয়ে নিজের মেন লাইন ধরে ঠিকই ছুটছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সিগনালও ছিল সেই থ্রু লাইনেরই, যেমন থাকার কথা। ট্রেনের চালক সিগনাল দেখতেও কোনও ভুল করেননি, ঠিক নিয়মে এবং যথাযথ গতিতেই ছুটিয়েছেন ট্রেন। তার পরেও থ্রু লাইনের পাশ থেকে ভাগ হওয়া লুপ লাইনে উঠে গেল করমণ্ডলের চাকা! তাও আবার ঘণ্টায় ১২৭ কিলোমিটার গতিবেগে থাকা অবস্থায়! সেই লাইনেই দাঁড়িয়ে ছিল মালগাড়ি। পুরোপুরি লোডেড। ফলে যা হওয়ার তাই হল, সটান মুখোমুখি ধাক্কা মারল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। এমার্জেন্সি ব্রেকের প্রশ্নই ছিল না, কারণ ট্রেনের চালকের কোনওভাবেই বোঝার কথা নয়, কী ‘ভুল’ হয়েছে। তাঁর লাইন এবং সিগনাল দুইই ছিল নির্ভুল। ফলে সাংঘাতিক অভিঘাতে দুমড়ে মুচড়ে গেল করমণ্ডল। মালগাড়িতে ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়ে যায় করমণ্ডলের একাধিক কোচ। ছিটকে পড়ে অন্য লাইনে। সেইসময় উলটো দিকের লাইন দিয়ে আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট হামসফর এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের কোচে ধাক্কা মেরে হাওড়াগামী ট্রেনের কয়েকটি কোচও লাইনচ্যুত হয়ে যায়। বর্ণনার অতীত নির্মম মৃত্যুযজ্ঞের সাক্ষী হল বালেশ্বরের কাছে অবস্থিত ছোট্ট জনপদ বাহানাগা বাজার।