ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: লোকসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের আসন সমঝোতা আটকে রয়েছে বাম শরিকদের অনড় মনোভাবের কারণে। বামেদের বড় শরিক সিপিএমের তরফে তাদের তিন শরিক আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিআইকে গতবারের থেকে একটি করে আসন ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারা তা ছাড়তে নারাজ। অথচ সিপিএম চাইছে, তাদের থেকে একটি করে আসন নিয়ে তা কংগ্রেস ও আইএসএফকে দিতে। কারণ সর্বভারতীয় দল হওয়ার সুবাদে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস কমপক্ষে ১০-১২টি আসন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তার উপর আইএসএফকেও কিছু আসন ছাড়তে হবে। মোট আসনের অন্তত ৫০ শতাংশ আসনে বামেদের বড় শরিক সিপিএম প্রার্থী দেবে। সেই কারণে বাকি তিন শরিককে যে ৩টি করে আসন দেওয়ার কথা সেখান থেকে ১টি আসন ছাড়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
যদিও কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে আসন সমঝোতার তীব্র বিরোধিতা করেছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। দলের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘কার জন্য একটি করে আসন ছাড়ব? কংগ্রেস? আইএসএফ? কেন ছাড়ব? কীজন্য ছাড়ব? বামপন্থীরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছে।
বামপন্থীদের অতীতকে ভুলে গেলে চলবে না। আমরা কোনও অবস্থাতেই কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে জোট করতে পারি না। যদি করি, তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করবে, সেটা বামফ্রন্টের সব নেতাকে বুঝতে হবে।’ তাঁর সাফ কথা, ‘আমরা কংগ্রেস, আইএসএফের সঙ্গে জোটে যেতে রাজি নই।’
তবে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ার কারণে বাম-কংগ্রেস কোনও পক্ষই তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করতে পারছে না। কারণ আসন নিয়ে কংগ্রেস অসম্মানিত হোক, সেটা চায় না সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, ‘আমরা খুব আন্তরিকভাবে কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে আসন সমঝোতার পক্ষপাতী। কিছু জায়গাতে আমাদের শরিক দল ও কংগ্রেস, দুই দলেরই দাবি রয়েছে। আমরা আশাবাদী, এই ছোটখাটো সমস্যা কাটিয়ে আমরা দ্রুত প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে দিতে পারব।’
উত্তরবঙ্গে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও বালুরঘাট আসনে প্রার্থী দেবে বামেরা। এর মধ্যে জলপাইগুড়ি আসনটিতে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেসের প্রার্থী থাকছে মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, রায়গঞ্জ ও দার্জিলিং আসনে।
বাম শরিকদের আসন না ছাড়ার মনোভাব নিয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সদস্য শংকর মালাকারের কটাক্ষ, ‘বাম শরিকরা বরাবরই এমন করে থাকে। ওদের ভোট নেই, ভোটের জন্য ওদের নির্ভর করতে হয় সিপিএমের উপরে। এদের অবস্থা হয়েছে বাড়ি নেই, তবু বাড়িওয়ালার মতো অবস্থা।’
কংগ্রেস যতই কটাক্ষ করুক না কেন, বাম শরিক সিপিআই এখনও তাদের ৩ আসনের থেকে ১টি আসন ছাড়তে নারাজ। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উজ্জ্বল চৌধুরীর বক্তব্য, ‘আমরা তিনটি আসনেই লড়তে চাই।’ আরএসপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস গোস্বামীর বক্তব্য, ‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু আরএসপি দলের নাম নিয়ে যে অসম্মান করেছেন তারপর কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাওয়া কি ঠিক?’