বর্ধমান: অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য গ্রামের কেউ ওই বেসরকারি ব্যাংকে গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করেননি। কিংবা কোনও ব্যক্তিগত নথিপত্রও জমা দেননি। অথচ অনেকের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম কার্ড। আর তা নিয়েই তোলপাড় পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের কালনা গ্রামে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রায় ছয় মাস আগে। একজন কুরিয়ার বয় এটিএম কার্ড নিয়ে গ্রামে হাজির হন। কুরিয়ার বয়ের কাছে থাকা এটিএম কার্ড ভর্তি খামের ওপর গ্রাহকের নাম-ঠিকানা উল্লেখ থাকলেও সঠিক কোনও ফোন নম্বরের উল্লখ ছিল না। স্থানীয় রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, কুরিয়র বয় স্থানীয়দের বলেন, যাঁদের ওই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে সেই গ্রাহকদের নামে এটিএম কার্ড এসেছে। প্রথমবারের এটিএম কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এবার দ্বিতীয়বার এটিএম কার্ড এসেছে। স্থানীয়রা কুরিয়ার বয়কে পরিস্কার জানিয়ে দেন, তাঁরা কোনওদিনই ওই বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় কোনও অ্যাকাউন্ট খোলেননি। স্থানীয় শেখ মতিউর রহমান জানান, তাঁরা ব্যাংকে গেলে ম্যানেজার জানান, তাঁদের নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। ব্যাংকের পাশবুকে তাঁদের ছবি দেখানো হয়। মতিউর রহমানের কথায়, ছবিতে দেখা যায় কেউ মাঠে ১০০ দিনের কাজ করছে, কেউ বাড়িতে রান্না করছে, আবার কেউ গোয়ালে কাজ করছে সেই অবস্থার ছবি দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। স্থানীয়রা লিখিতভাবে গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়ে ব্লক ও জেলা প্রশাসনের দপ্তরে জানান।
এই বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে তদন্ত চলছে। এবিষয়ে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানান, অভিযোগ জমা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে এই ঘটনায় শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তর্জা। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রর কথায়, খণ্ডঘোষ ও সংলগ্ন ব্লকগুলিতে ধান প্রধান চাষ। এসব ব্লকে বহু রাইসমিল আছে। কালো টাকা সাদা করতে অসাধু রাইসমিল মালিকরা স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কালনা গ্রামে দরিদ্র মানুষদের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে কেলাফতে করছে না তো? এই প্রশ্ন সামনে এনে মৃত্যুঞ্জয়বাবু ইডি তদন্ত দাবি করেছেন। সিপিএমের দাবি, তৃণমূল এই ঘটনায় জড়িত। যদিও খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম জানান, সব বিষয়ে তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলাটাই বিরোধীদের কাছে এখন অস্তিত্ব জাহিরের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমরাও চাই প্রশাসন যথাযথ তদন্ত করে ঘটনার সত্য সামনে এনে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করুক।