চাঁচলঃ শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে ১০০ দিনের বকেয়া টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে। ২৮জন শ্রমিকের গণস্বাক্ষর নিয়ে সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য। যদিও সুপারভাইজারদের পালটা দাবি, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যই সেখানে কাটমানির দাবি করেছিল। এই ঘটনা সামনে আসতেই বিরোধীদের অভিযোগ ১০০ দিনের কাজে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে তা স্পষ্ট। সেই দুর্নীতির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে এখনও তৃণমূলের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, চাঁচলে সম্প্রতি শ্রমিকদের বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে জোর করে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুরে। শ্রমিকদের অভিযোগ, সুপারভাইজাররা টাকা ঢোকার পরেই বাড়ি বাড়ি এসে টাকা নিয়ে গিয়েছেন। কারও কাছ থেকে তিন হাজার টাকা, আবার কারও কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। আবার অনেকের সম্পূর্ণ টাকাটাই নিয়ে নিয়েছেন ওই সুপারভাইজাররা। আরও অভিযোগ, অনেক শ্রমিকের কাছ থেকে এপিএস মেশিন দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এইভাবে প্রায় ২৮ জন শ্রমিকের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা তুলেছেন অভিযুক্তরা।
শ্রমিকদের গণস্বাক্ষর নিয়ে চাঁচলের মহকুমা শাসক এবং চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের বিডিওর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বাটুল হক। অভিযোগ পেয়ে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। অভিযোগকারী শ্রমিক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি কাজ করেছিলাম, কিন্তু আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। আমার ছেলে কাজ করেছিল, অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকা ঢুকেছে। সুপারভাইজাররা জোর করে সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে গিয়েছে।’
আরেক শ্রমিক জাহাঙ্গির আলমের অভিযোগ, ‘সুপারভাইজাররা আমার বাড়িতে মেশিন নিয়ে এসেছিল টাকা ঢুকেছে কিনা সেটা চেক করার জন্য। সেই সময় আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে গিয়েছিল। ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি আমার পাঁচ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বাটুল হক জানান, ‘শ্রমিকরা আমাকে এসে বিষয়টি জানিয়েছে। তারপরেই আমি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। রাজ্য সরকার হকের টাকা দিয়েছে। সেখানে কোনও দুর্নীতি বরদাস্ত করব না।’
যদিও সুপারভাইজার মেরাজুল হকের দাবি, ‘এলাকায় অনেক দুঃস্থ ব্যক্তির জবকার্ড ছিল না। তাঁরা অন্যের জবকার্ড নিয়ে কাজ করেছিলেন। তাই যখন টাকা ঢোকে, তখন জবকার্ড হোল্ডাররা স্বেচ্ছায় সেই টাকা দিয়ে দেয় ওই শ্রমিকদের। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ভাগ দাবি করেছিল। আমরা দিইনি বলে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’ চাঁচলের এসডিও সৌভিক মুখার্জির আশ্বাস, ‘সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখব। প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’