ইসলামপুরঃ টিকিট নিয়ে পরিবারতন্ত্রের কাজিয়া কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের। জেলা পরিষদের বিদায়ি সদস্য তথা তাঁর মেয়ে আর্জনা বেগমকে জেলা তৃণমূল সভাপতি চক্রান্ত করে টিকিট দেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন চোপড়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিধায়ক হামিদুল রহমান। হামিদুলের দাবি, লক্ষ লক্ষ টাকায় ওই টিকিট বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাঁর মেয়ের আসনেই নয়, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি ফারহাত বানু এবং তাঁর স্বামী জাভেদ আখতারকেও বঞ্চিত করে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থীপদ অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন হামিদুল।
আর্জুনা বলছেন, ৭০ লক্ষ টাকায় আমার প্রাপ্য টিকিট গোষ্ঠী কাজিয়ার কারণে আমাকে বঞ্চিত করে অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে। তাই আমি ইসলামপুরের বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরীর সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হয়েই লড়ব। গতবারের মতো এবারও রেকর্ড ভোটে জিতে আসব।’ হামিদুলের দাবি, ‘এলাকার মানুষ তাঁর মেয়েকে জয়ী করে জেলার নেতাদের উচিত শিক্ষা দেবে।’
করিমের পর্যবেক্ষণ, আর্জুনার আসনে কয়েক লক্ষ টাকায় টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে আমিও শুনেছি। ও আমার সমর্থিত নির্দল প্রার্থী।’ এদিন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আপনি হুঁশিয়ারি বলুন বা অনুরোধ, ইসলামপুরের পঞ্চায়েত ভোটে আপনি মাথা ঘামাবেন না।’
তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিলে কী করবেন? করিমের সাফ জবাব, ‘এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমি নির্দল প্রার্থী দেওয়া থেকে পিছু হটছি না।’ হামিদুলের অভিযোগের প্রশ্নে জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলছেন, ‘বুথস্তর থেকে যাঁর নাম এসেছিল তিনিই টিকিট পেয়েছেন। টিকিট চূড়ান্ত করার বিষয়ে জেলা সভাপতির কোনও ভূমিকা থাকে না। নির্দলদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রবিবার তৃণমূলের টিকিট বণ্টনের খবর উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশিত হতেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। হেমতাবাদ থেকে চোপড়া পর্যন্ত দলের প্রভাবশালীদের পরিবারে টিকিট বণ্টন নিয়ে নীচুতলার কর্মীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। তারমধ্যে নতুন সংযোজন, দলের জেলা সহ সভাপতি হরসুন্দর সিনহা ইসলামপুর পঞ্চায়েত সমিতির জন্য টিকিট পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের টিকিট পেয়েছেন। হরসুন্দর জেলা পরিষদের বিদায়ি সদস্য।
হামিদুলের ছেলে ৩ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে টিকিট পেয়েছেন। কিন্তু ইসলামপুর ব্লকের ৪ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে হামিদুলের মেয়ে আর্জনাকে দল টিকিট দেয়নি। হামিদুল অবশ্য মেয়ের টিকিট না পাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। প্রশ্ন উঠছে, হামিদুলের এত ক্ষোভের কারণ কী? হামিদুলের যুক্তি, ‘ছেলে আমার কাছে থাকে। কিন্তু মেয়ের তো বিয়ে হয়েছে। সে বিদায়ি সদস্য। ইসলামপুরে তার শ্বশুরবাড়ি। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে যোগ্য আর্জুনার টিকিট বিক্রি করে তাকে বঞ্চিত করা হল। আর্জুনা করিম সাহেবের সঙ্গে দল করে। এলাকার মানুষ ওকে জিতিয়ে নিয়ে এসে জেলা সভাপতিকে উচিত শিক্ষা দেবে।’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘রাজ্য কমিটির সদস্য জাভেদ আখতারের ৬ নম্বর আসন জেলা নেতৃত্ব লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে তাঁকে কংগ্রেসে যেতে বাধ্য করেছে।’
করিম বলছেন, ‘আমার পাঠানো প্রার্থীতালিকায় হামিদুলের মেয়ের নাম ছিল। কিন্তু দল যখন টিকিট দিল না ও আমার প্রার্থী হয়ে নির্দলেই লড়বে। মমতা দলকে ঠিক রাখতে হুঁশিয়ারি দিতেই পারেন, ব্যবস্থাও নিতে পারেন। কিন্তু এলাকার তৃণমূল কর্মীদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের পাশে দাঁড়ানো বিধায়ক হিসেবে আমার কর্তব্য। দলীয় প্রতীক যখন আমার প্রার্থীরা পেলেন না তাহলে তাঁরা সকলেই নির্দলে লড়বেন। ২১ জুন প্রার্থীদের নিয়ে আমার বাসভবনে বৈঠক ডেকেছি। সেখানেই আমার প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করব।’
হামিদুল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গোটা চোপড়া ব্লক ইতিমধ্যে দখল করে বসে আছেন। কানাইয়া শিবিরের বিরুদ্ধে করিম- হামিদুল যুগলবন্দি পঞ্চায়েত ভোটে ইসলামপুর ব্লকে কতটা প্রভাব ফেলবে সেদিকেই তাকিয়ে আছে হামিদুলের ছেলে চোপড়া থেকে রাজনৈতিক মহল।