তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: পরিবেশবান্ধব উপায়ে কীভাবে ওষুধ তৈরি করা যাবে তা নিয়ে দিশা দেখাচ্ছে শিলিগুড়ির ডঃ ভাস্কর চক্রবর্তীর গবেষণা। ক্ষতিকর বর্জ্য উত্পাদনকারী বিক্রিয়ার পরিবর্তে যথাসম্ভব কম ক্ষতিকর ও পরিবেশবান্ধব জিনিস ব্যবহার করে ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’ নিয়ে কাজ করেছেন সিকিম সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ চক্রবর্তী। ইতিমধ্যেই তাঁর ওই গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে ‘জার্নাল অফ অর্গানিক কেমিস্ট্রি’-তে। মেকানিক্যাল কেমিস্ট্রি বা যান্ত্রিক রসায়ন নিয়ে কাজ করেছেন তিনি অর্থাৎ যান্ত্রিক ঘটনা দ্বারা রাসায়নিক বিক্রিয়ার সূচনা।
নতুন প্রজন্ম যাতে সুস্থ পরিবেশে বড় হতে পারে সেদিকে নজর দিয়েই শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের প্রাক্তনী ভাস্করবাবুর এই প্রচেষ্টা। ইতিমধ্যেই দূষণ কমাতে সবুজ হাইড্রোজেনের ব্যবহার কীভাবে করা যাবে তা নিয়েও তিনি গবেষণা করেছেন। ক্ষতিকর রসায়ন প্রয়োগ না করে কীভাবে ওষুধ তৈরি করা যাবে মূলত এদিকে নজর দিয়েই ‘গ্রিন কেমিস্ট্রি’ নিয়ে তথ্যনির্ভর গবেষণা করেছেন। সবুজ রসায়ন হল রসায়নের একটি পদ্ধতি যা দূষণ প্রতিরোধ বা হ্রাস করার চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টাই যেন বর্তমানে রসায়ন নিয়ে গবেষকদের মূল আগ্রহের জায়গা হয়ে উঠেছে। প্রফেসর ডঃ চক্রবর্তীও দীর্ঘ গবেষণার পর এই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মেকানিক্যাল কেমিস্ট্রি বিষয়ে গবেষণা নিয়ে ডঃ চক্রবর্তী বলেন, ‘ক্ষতিকারক বর্জ্যের পরিবর্তে যদি পরিবেশবান্ধব উপায়ে গবেষণা করা হয় তাহলে পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্যও ভালো হবে। কারণ আগে যখন আমরা গবেষণা করতাম তখন এমন কতগুলো মৌল ব্যবহার করা হত যা ক্ষতিকারক কিন্তু সেগুলো এখন আর ব্যবহার করা হয় না। আমি গ্রিন কেমিস্ট্রির যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছি ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে তার ব্যাপক ব্যবহার হতে পারে।’ ইতিমধ্যেই ডঃ চক্রবর্তীর এই গবেষণাকে মান্যতা দিয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও।
২০১৯ সালে কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক ফেলো হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অফ এথেন্স-এর মতো বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রিন কেমিস্ট্রি নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন শিলিগুড়ি মিলনপল্লির বাসিন্দা ডঃ চক্রবর্তী। সেখানে এই অর্গানিক কেমিস্ট্রির বিভিন্ন মৌল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওষুধ তৈরিতে কীভাবে মোকানিক্যাল কেমিস্ট্রি ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রফেসর চক্রবর্তী বলেন, ‘বর্তমানে ওষুধশিল্পে এই মেকানিক্যাল কেমিস্ট্রির ব্যবহার অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। যা ওষুধ তৈরির শিল্পে বড় পরিবর্তন আনতে চলছে। আগে যেখানে একটি ওষুধ তৈরিতে অনেক সময় লাগত, সেই সময় এখন অনেক কম লাগবে। পাশাপাশি উৎপাদন বেশি হলে ওষুধ অনেকটা কমদামে সাধারণ মানুষ পাবেন।’ ভাস্করবাবুর এই গবেষণা যে ওষুধশিল্পে নতুন দিশা দেখাবে তা কিন্তু বলাই যায়। তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি। গ্রিন কেমিস্ট্রির আরও অনেক বিষয়টি গবেষণা করতে চান মেধাবী এই গবেষক প্রফেসর।