- শাঁওলি দে
এই তো কিছু বছর আগেও ডে বলতে তো বুঝতাম ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে, রিপাবলিক ডে’র মতো আর দু’-একটি বিশেষ দিন। স্কুল-কলেজে পালিত হত আরও কয়েকটি বিখ্যাত মানুষের জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন। আর পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো হঠাৎ বৃষ্টি নামলে পাওয়া যেত রেইনি ডে। উফ! হঠাৎ পাওয়া এই ছুটি যে কী মহার্ঘ ছিল এখনও ভাবলে মজা লাগে।
ইদানীংকালে এইসব হাতেগোনা ডে’গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে। এখন প্রতিদিনই কোনও না কোনও ডে’র আনন্দে মেতে উঠেছি আমরা।
সেই যে গত ছাব্বিশে জানুয়ারি রিপাবলিক ডে হয়েছিল তারপর তো আবার ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে! কিন্তু তা কি আর হয়? মাঝের এতগুলো দিন কি শুধুই ক্যালেন্ডারের সোম থেকে রবি হয়েই আটকে থাকবে?
সুতরাং মাঝে চলে এল কত কত দিন! হাগ ডে, রোজ ডে, কিস ডে, হ্যানা ডে, ত্যানা ডে আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে তো আছেই।
আমরা চিরকালই পাশ্চাত্যপ্রেমী। কিংবা বলা ভালো অনুকরণপ্রেমী। ইংরেজদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলেও বারবার ফিরে এসেছি ওদের সংস্কৃতির কাছে, নতজানু হয়েছি অন্যের ভাষার কাছে, শিক্ষার কাছে। যার ফল পেয়েছি হাতেনাতে। যত অন্যের দিকে ছুটে যাচ্ছি ততই ভুলে যাচ্ছি নিজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভুলে যাচ্ছি নিজেদের ইতিহাস।
অন্যকে অনুকরণ করার মধ্যে কিন্তু অন্যায় কিছুই নেই, কিন্তু কোনওকিছুরই অন্ধ অনুকরণ কখনোই কাম্য নয়। তবে এই অনুকরণ করতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাব? তাই কখনও হয়?
সদ্য ফেলে আসা দোল উৎসবের কথাই ভাবছিলাম। এটা একটা এখন ইভেন্টই বটে! দোলপূর্ণিমা আর হোলি কখন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এই প্রজন্ম শুধু আনন্দে মত্ত হতে জানে, এর পেছনের কাহিনী জানে না।
বিয়ে বা বৌভাতের অনুষ্ঠানও আজ তার ঐতিহ্য ভুলেছে। গায়ে হলুদ হয়েছে হলদি, মাঝখানে এসেছে মেহেন্দি, সংগীত। বৌভাত বদলে গিয়ে রিসেপশন আরও কত কী! সবই আছে, আনন্দও আছে, উচ্ছ্বাসও হয়েছে দ্বিগুণ তবু কীসের জন্য যে মনটা সবসময় খচখচ করে, কে জানে! যদিও এসবের একটা ব্যবসায়িক দিক আছেই, তবু সাধারণের এই উন্মাদনাকে কিছুটা বাড়াবাড়িই মনে হচ্ছে।
আসলে নতুন কিছুকে সবসময় স্বাগতই জানাতে হয়, কিন্তু পুরোনো ভুলে নয়। নতুন চারা বুনলে কি প্রাচীন বটবৃক্ষটার গুরুত্ব কমে যায়? নাকি নবজন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির বয়স্কদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়?
সকালে ঘুমচোখে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় চোখ বুলিয়ে যে মেয়েটা দেখে আজ অমুক ডে, তখুনি গুগল ঘেঁটে সেই ডে’র ওপর ছবি ও স্ট্যাটাস শেয়ার করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সন্ধে অবধি তার কি তেমন কিছু স্মৃতিতে থাকবে? মনে পড়বে, পরের বছর মেমরিতে যখন ভেসে উঠবে গত বছরের কর্মকাণ্ড!
(লেখক জলপাইগুড়ির শিক্ষক ও সাহিত্যিক)