প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ ‘ভারত বাদ্য দর্শনম’ এখন রাজধানীর সাঙ্গীতিক মহলে চর্চার বিষয়। শনিবার রাতে জি-২০র মঞ্চে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ডাকা নৈশভোজের আগে সঙ্গীত নাটক আকাদেমির তরফে আয়োজিত হয় এই বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম সারির বাদ্যযন্ত্রীদের অনবদ্য পরিবেশন ইতিমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে অতিথি অভ্যাগতদের। উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সহ উপস্থিত সকলেই। এই বাদ্যযন্ত্র পরিবেশনায় নজর কেড়েছে বাংলার শিল্পীরা। হাওড়া শিবপুরের ‘সরোদ সিস্টার্স’ ত্রৈলী দত্ত এবং মৈশিলী দত্তের সরোদ বাদনে রবি ঠাকুরের ‘একলা চলো রে’ এবং ভূপেন হাজারিকার ‘ও গঙ্গা তুমি’র মূর্চ্ছনায় মুগ্ধ বাইডেন থেকে হাসিনা, সকলেই। প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাংলা থেকে আসা মোহনবীণা ও সুরশৃঙ্গার বাদক জয়দীপ মুখার্জি, রুদ্রবীণাবাদক সায়ক মিত্র এবং মত্তকোকিলা বীণাবাদক শুভেন্দু ঘোষের মতো প্রথিতযশা শিল্পীরাও।
শনিবার রাতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চে রীতিমত অভিনব পরিবেশনা ‘বাদ্যবৃন্দ’র সঙ্গীত নির্দেশক ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক তথা সংগীত নাটক আকাদেমির স্কলার চেতন যোশী৷ অনুষ্ঠানের রোমাঞ্চ এবং সাফল্যের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে চেতনের বক্তব্য, ‘এত বড় আন্তর্জাতিক মঞ্চে গোটা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি৷ আমরা যে চূড়ান্ত সাফল্যের সঙ্গে ভারতের সঙ্গীত ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে এদিন তুলে ধরতে পেরেছি, এর একমাত্র কৃতিত্ব আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজির৷ ওনার উদ্যোগেই সব কিছু সুনিপুণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷’ এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন সংগঠন সঙ্গীত নাটক আকাদেমিকেও ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি চেতন।
এই অনুষ্ঠানেই সরোদ বাজিয়ে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন হাওড়ার ‘সরোদ সিস্টার্স, শিল্পী ত্রৈলী ও মৈশিলী দত্ত৷ ত্রৈলীর কথায়, ‘বিশ্বের বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়কদের সামনে পারফর্ম করার সুযোগ প্রদান করার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজিকে ধন্যবাদ ও প্রণাম জানাই৷ এই অভিজ্ঞতা অবিস্মরণীয়৷’ মৈশিলী দত্তের মতে, ‘এই অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। সারাজীবন মনে রয়ে যাবে।’ একই উচ্ছ্বাস ও আবেগ ধরা পড়েছে বাংলার অন্য শিল্পীদের কণ্ঠেও। মোহন বীণাবাদক জয়দীপ মুখার্জি সদ্য হারিয়েছেন তাঁর বাবাকে, মায়ের শরীরও ভালো নয়, তবু দিল্লিতে দেশের সংগীতমহলকে বিশ্বের দরবারে প্রতিনিধিত্ব করতে ছুটে এসেছেন তিনি। অন্য দুই সপ্রতিভ শিল্পী সায়ক মিত্র এবং শুভেন্দু ঘোষের অবদানও, এককথায় অভাবনীয়।
জি-২০ র মঞ্চে নজর কেড়েছেন প্রশান্ত বানিয়াও। থানের বাঁশি বাদক প্রশান্ত বানিয়া চোখে দেখতে পান না৷ ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিহীন৷ নিজের দৃষ্টিশক্তির প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে তিনি বাঁশিকেই নিজের সেরা বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ সেই প্রশান্ত সুযোগ পেয়েছিলেন দিল্লিতে এসে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আগত রাষ্ট্রনায়কদের সামনে বাঁশি বাজানোর৷ তাঁর বাঁশির সুর মুগ্ধ করেছে সবাইকে৷ সরকারি সূত্রের দাবি, তিনটি দেশের উচ্চপদস্থ পদাধিকারীরা প্রশান্ত-কে বিদেশে নিয়ে গিয়ে পারফর্ম করানোর জন্য উত্সাহ প্রকাশ করেছেন ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে৷ একইরকম ভাবে বিদেশি অতিথিরা মুগ্ধ হয়েছেন মুম্বইয়ের দৃষ্টিহীন তবলাবাদক সচিন প্যাটেলের পারফরমেন্সে৷ তাকে নিয়েও প্রবল উত্সাহ দেখিয়েছেন বিদেশি প্রতিনিধিরা, নয়াদিল্লিতে দাবি সরকারি সূত্রের৷
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জি-২০র মঞ্চে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ৭৮ জন কৃতি বাদ্য যন্ত্রশিল্পীদের জন্য৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে গোটা বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতা, কূটনীতিকদের সামনে পারফর্ম করতে হবে, তাদের মুগ্ধ করতে হবে নিজেদের বাদ্য মুর্চ্ছনায়৷ সেই চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছেন সবাই৷ জি-২০ মত বিরাট আন্তর্জাতিক মঞ্চে যোগত্যার সঙ্গে পারফর্ম করার এই সাফল্যই কারও কারও ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে চলেছে, এমনই দাবি নয়াদিল্লিতে সরকারি সূত্রের৷