নয়াদিল্লি: বছর গড়ালেই লোকসভা নির্বাচন। চলমান পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে এমনিতে নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই কেন্দ্রীয় শাসকদলের তাবড় নেতৃত্বের। এরই মধ্যে জি২০ ভার্চুয়াল সামিটের দিনক্ষণ ঘোষণা করল মোদি সরকার। শনিবার কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী বুধবার ২২ নভেম্বর জি২০ ভার্চুয়াল সামিট আয়োজন করতে চলেছে দিল্লি, যার সভাপতিত্ব করবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩০ নভেম্বর শেষ হচ্ছে জি২০তে ভারতের সভাপতিত্বের মেয়াদ। তার আগে আরও একবার ভোটের আবহে নিজ সরকারের নানাবিধ কৃতিত্বের গুণপনা বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনায়কদের উপস্থিতিতে তুলে ধরবেন নরেন্দ্র মোদি, এমনটাই দাবি নয়াদিল্লি সূত্রের।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে ভারত মণ্ডপম সেন্টারে বসেছিল জি২০-র বর্ণাঢ্য আসর। ‘এক বিশ্ব এক পরিবার এবং ভবিষ্যৎ’-র লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে পর্যালোচনা ও চিন্তনের উদ্দেশ্যে দিল্লিতে ভিড় করেছিলেন দেশবিদেশের অসংখ্য রাষ্ট্রনায়ক। তিনদিনের জি২০ সুসম্পন্ন হওয়ার শেষলগ্নে এই ভার্চুয়াল সামিটের প্রস্তাব রাখেন মোদি, যাতে সহমত হন সকলেই। তবে জি২০ শেষ হলেও উঠেছিল বেশকিছু প্রশ্ন। সূত্রের খবর, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে বিতর্ক এড়াতে সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লির ভারতমণ্ডপমে জি২০ বৈঠকে সশরীরে যোগ দেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিলেন তাঁর বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরফ-কে। তবে এবার ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেন তিনি। একইসূত্রে জল্পনা চিনা প্রিমিয়ার শি জিনপিং-কে নিয়েও।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখনও উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে ভূ-কূটনীতি। সেই উপলক্ষে নয়াদিল্লির জি২০ ভার্চুয়ালেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ তৎপরতা ও ব্যবস্থা। পুতিনের বক্তৃতার সময়ে আমেরিকা সহ পশ্চিমি রাষ্ট্রনেতাদের ক্ষোভ বা বক্রোক্তি যাতে সর্বসমক্ষে ফুটে না ওঠে, সে জন্য স্থির হয়েছে, একজন রাষ্ট্রনেতার বক্তৃতার সময়ে বৈদ্যুতিন পর্দায় অন্য কারও উপস্থিতি রাখা হবে না। অর্থাৎ একজনেরই মুখ দৃশ্যমান থাকবে। শুধুমাত্র কয়েকটি সামগ্রিক ছবি নিয়ে রাখা হবে, যাতে উপস্থিত সমস্ত নেতারা থাকবেন। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে এও জানা গিয়েছে, বুধবার এই ভার্চুয়াল সামিটের প্রারম্ভে মোদির প্রারম্ভিক বক্তৃতার পরই বৈঠকটিকে রুদ্ধদ্বার করে দেওয়া হবে, অর্থাৎ বাকিদের বক্তৃতা আর সর্বসমক্ষে দেখানো হবে না। কোনও যৌথ বিবৃতি প্রকাশের পরিকল্পনা এখনও নেই। তবে একটি প্রেস বিবৃতি অবশ্যই জারি করবে ভারত। উপস্থিত অন্য দেশগুলির দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্রনেতার বিবৃতিও পরে প্রকাশিত হবে। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধই নয়, ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের সংঘাত নিয়েও উত্তপ্ত হতে পারে জি২০ ভার্চুয়াল মঞ্চ। সেটিকেও সামনে আনতে চায় না নয়াদিল্লি।
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের মতো অভ্যাগত সমস্ত দেশগুলির কাছে গেছে আমন্ত্রণ। বাইডেন থেকে সুনক, হাসিনা থেকে ম্যাঁক্রো, সকলেই তাঁদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছেন বলে দাবি বিদেশমন্ত্রকের। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী খলিস্তানি আন্দোলনকে মদত দেওয়ায় অভিযুক্ত কানাডার জাস্টিন ট্রুডো ভার্চুয়াল সামিটে অংশ নেবেন কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়, যদিও জি-২০র প্রথা মেনে আমন্ত্রণ গিয়েছে কানাডায়। তবে জি২০ ভার্চুয়াল সামিটে অংশ নেবে সদ্য গোষ্ঠিভুক্ত হওয়া আফ্রিকান ইউনিয়নও। অংশ নেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সহ আরও একাধিক প্রতিনিধিরা৷ নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শেষ আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলনে আর একবার ভারত সরকারের গুণগানের প্লাবন ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০২৪-এর লক্ষ্যে বিশ্ব তথা মানবকল্যাণের নিরিখে ভারত সরকারের অবদান, বৈশিষ্ট্য কতটা হিতকর ও যুগপযোগী তা সর্বসমক্ষে ব্যক্ত করতে পিছপা হবেন না মোদি, কারণ পরবর্তীতে এই জি২০-র সাফল্য আগামী বছর নির্বাচনি প্রচারে বড়সড় হাতিয়ার হিসেবে প্রতিপন্ন হতে পারে পরিবর্তন বনাম প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ে। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে বুধবার জি২০ ভার্চুয়াল সামিটের দিকেই লক্ষ্য রাখছে কেন্দ্রীয় তথা বিরোধী রাজনৈতিক মহলের প্রতিনিধিরা।