গাজোল: ১৯৪৮ সাল। বর্তমান গাজোল শহর তখন নেহাতই ছোট্ট একটা গ্রাম। আশেপাশের এলাকার জমিদার বাড়িগুলিতে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হলেও গাজোল শহর এলাকায় একটিও পুজো হত না। সেইসময় উৎসাহী কিছু মানুষজন দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে মাটির ঘর আর খড়ের ছাউনি দেওয়া মন্দিরে পুজো শুরু হলেও বর্তমানে তৈরি হয়েছে ঝা চকচকে মন্দির। সেইসময় থেকে আজও পঞ্জিকা মতে সমস্ত বিধি মেনে মায়ের পুজো করা হয়। আর সেই কারণেই অন্ততপক্ষে একবার আদি দুর্গা মন্দিরে উপস্থিত না হলে গাজোলবাসীর পুজো যেন সম্পূর্ণতা লাভ করে না।
আদি দুর্গা মন্দিরের সেবাইত এবং পুরোহিত বিশ্বরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের বিধি মেনে পুজোর ঘট স্থাপন করা হয় পঞ্চগুড়ি দিয়ে। পঞ্চগুড়ির যে পাঁচটি রং ব্যবহার করা হয় তা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা হয়। বেলপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে তৈরি হয় সবুজ রং, লাল ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি হয় লাল রং, আতপ চালের গুঁড়ো দিয়ে সাদা রং, কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করে হলুদ রং এবং ধানের তুষ হালকা পুড়িয়ে সেটিকে গুঁড়ো করে কালো রং তৈরি করা হয়। অষ্টমীর দিন ভদ্রমন্ডল পুজো হয়। এখানে পুজোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সন্ধিপুজো, সিঁদুর খেলা, নবমীর ভোগ এবং বিসর্জন। নবমীর দিন মায়ের বিশেষ ভোগ রান্না করা হয়। গঙ্গাজল, আতপ চাল, মুগ ডাল, সৈন্ধব লবণ এবং ঘি দিয়ে তৈরি হয় মায়ের ভোগ। কাজু, কিশমিশ, বাদাম দেওয়া হলেও মায়ের ভোগে কোনরকম ফোড়ন দেওয়া হয় না। রান্নায় হলুদ ব্যবহার নিষিদ্ধ। এছাড়াও ওইদিন মাকে দেওয়া হয় লবণ ছাড়া আলুভাজা। দশমীর দিন নিয়ম মেনে প্রথমে ঘট বিসর্জন করা হয়। এরপর বিসর্জন হয় নবপত্রিকার। তারপর শুরু হয় অপরাজিতা পুজো। নিয়ম মেনে বিসর্জন সাঙ্গ হওয়ার পর শুরু হয় মহিলাদের সিঁদুর খেলা। এরপর ভক্তদের কাঁধে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের কালি দিঘিতে। সেখানে শেষ হয় বিসর্জনের কাজ।
পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা কিশোর সরকার বলেন, ‘এবার আমাদের পুজোর ৭৬তম বর্ষ। এখনও নিয়ম মেনে দুর্গা দালানে মায়ের প্রতিমা তৈরি হয়। বংশপরম্পরায় সেই মৃৎশিল্পীদের পরিবার প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। একমাত্র এখানেই একচালার সাবেকি প্রতিমার উপরে পটচিত্রে থাকে জয়া বিজয়া এবং মহাদেব। সব মিলিয়ে আদি দুর্গা মন্দিরের না আসলে গাজোলবাসীর পুজো যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।‘