Tuesday, April 30, 2024
HomeTop Newsএকাই ফিরছিল, মেয়েটিকে টেনে নিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা, তারপর কী হল সেই বিকেলে?...

একাই ফিরছিল, মেয়েটিকে টেনে নিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা, তারপর কী হল সেই বিকেলে?   

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার নিম্ন আদালতের রায়ের সাজা বদল হল কলকাতা হাই কোর্টে। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত দু’জনের ফাঁসির সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। আর এক ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আমিন আলি হয়ে গেলেন বেকসুর খালাস। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন জেলের সাজাপ্রাপ্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করও ১০ বছর জেল খাটার কারণে খালাস পেয়েছেন হাই কোর্ট থেকে।

কী হয়েছিল সেদিন কামদুনিতে? উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে কামদুনি গ্রাম। বছর নয়েক আগে ওই গ্রামে ঘটে যায় এক নৃশংস ঘটনা। ধর্ষণ করে খুন করা হয় এক কলেজছাত্রী তরুণীকে।  এই ধর্ষণের ঘটনায় ঝড় ওঠে রাজ্যে। ২০১৩ সালের ৭ জুন। বুধবার বিকেলে বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ডিরোজিও কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। তাকে  কামদুনি বাস স্ট্যান্ডে আনতে যাওয়ার কথা ছিল ভাইয়ের। ভাই না যাওয়ায় তরুণী একাই রওনা দেন বাড়ির উদ্দেশে।

মাছে ভেরির পাশের নির্জন পথ ধরে হেঁটেই বাড়ি ফিরছিলেন একাই। তরুণীকে একা পেয়ে টেনেহিঁচড়ে পাঁচিলঘেরা পরিত্যক্ত একটি জায়গায় নিয়ে যায় ৯ দুষ্কৃতী। সেখানে দুষ্কৃতীরা ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর মেয়েটির দুটো পা ধরে চিরে দেয় দুষ্কৃতীরা। মেয়েটি বাড়ি না ফেরায় পরিবারের তরফে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের লোকেরা। এর পর গভীর রাতে ওই জায়গায় পাওয়া যায় তরুণীর ব্যাগ। পাশেই পাওয়া যায় ওই তরুণীর ছিন্নভিন্ন দেহও। নিহত তরুণীর পরিবারের দাবি, তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর দুষ্কৃতীরা তাঁর দেহ চিরে দেয় নাভি পর্যন্ত।

ওই বছরেরই কামদুনি ফাঁড়ির পুলিশ তদন্তে নেমে ৯ জুন আনসার আলি মোল্লা-সহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয়দের দাবি অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের সদস্য। দোষীদের চরম শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন গ্রামবাসীরা। সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন নিহত তরুণীর সহপাঠী টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমি কয়াল। ওই আন্দোলনে শামিল হন রাজ্যের বিদ্বজ্জনেদের একাংশও। কামদুনিকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল বিধানসভাও।

কামদুনির গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সইফুল আলি মোল্লা, আনসার আলি মোল্লা, আমিন আলি, ইমানুল হক, গোপাল নস্কর, ভোলা নস্কর, আমিনুল ইসলাম, রফিক গাজি এবং নুর আলিকে। এর মধ্যে হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হয় গোপাল নস্করের। যে পাঁচিলঘেরা জায়গায় গণধর্ষণ করা হয়েছিল, সেখানকার কেয়ারটেকার ছিলেন গোপাল।

এর পর পরিস্থিতি সামাল দিতে কামদুনিতে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং বসিরহাটের সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। কামদুনিতে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে। ওই কাণ্ডে গ্রেপ্তার করা হয় মোট ৯জনকে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন ১৫ দিনের মধ্যে ধৃতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পুলিশ। সরকার দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করবে বলেও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পর কামদুনিকাণ্ডের ২২ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২৯ জুন জেলা আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়। এর পর দিন দশেকের মাথায় দেওয়া হয় অতিরিক্ত চার্জশিটও।

২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর শেষ হয়েছিল কামদুনিকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া। ভয়াবহ ওই ঘটনায় আড়াই বছর পর ২৮ জানুয়ারি রায় ঘোষণা হয় কামদুনি মামলায়। দোষীদের মধ্যে আনসার আলি মোল্লা, সইফুল আলি এবং আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেয় নিম্ন আদালত। আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় শেখ ইনামুল ইসলাম, ভোলানাথ নস্কর এবং আমিনুর ইসলামকে। এরপরই নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে যায় সাজাপ্রাপ্তরা। শুক্রবার কামদুনি ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত দু’জনের সাজা বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ।

এদিন হাই কোর্টে কামদুনি-রায় ঘোষণা হতেই আদালত চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন কামদুনির আন্দোলনকারী মৌসুমী এবং টুম্পারা। বিচারপতিদের এজলাসে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই বসে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করেন তাঁরা। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞানও হয়ে যান মৌসুমী! জ্জান ফিরতেই মৌসুমী বলেন, ‘‘আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাব। নির্ভয়া-কাণ্ডের আইনজীবীর সাহায্য নেব।’’

উচ্চ আদালতের রায়ে অনাস্থা প্রকাশ করে টুম্পা বলেন, “আমাদের বন্ধুর জন্য আমরা সেই ২০১৩ সাল থেকে আন্দোলন করছি। আমাদের উপর কম অত্যাচার হয়নি। আমরা সব সহ্য করেছি। কিন্তু এত বছর অপেক্ষার পর এই হল! কিন্তু আমরা থেমে থাকব না।’’

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Raiganj | স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করার পরই নিখোঁজ বধূ, খুনের আশঙ্কা পরিবারের

0
রায়গঞ্জ: স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করার পর থেকেই নিখোঁজ স্ত্রী। রায়গঞ্জের মেরুয়াল এলাকার ঘটনা। নিখোঁজ মহিলার নাম সীমা ধর। তার পরিবারের অভিযোগ, সীমার ওপর প্রায়...

Telangana | অমিত শাহের ভিডিও বিকৃতির জের, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীকে সমন দিল্লি পুলিশের

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমিত শাহ-র বিকৃত করা ভিডিও তেলেঙ্গানা কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে শেয়ার করার অভিযোগে দিল্লি পুলিশ সমন পাঠাল তেলেঙ্গানার...

Narendra Modi | বাতিল শা’র সভা, ৩ মে নির্বাচনি প্রচারে কৃষ্ণনগরে আসছেন মোদি

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: আগামী ১৩ মে চতুর্থ দফায় লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election 2024) কৃষ্ণনগরে (Krishnanagar)। তার আগে মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) কৃষ্ণনগরে...

CM Mamata Banerjee | ‘সিপিএম কিনলে কংগ্রেস ফ্রি’, জোটকে কটাক্ষ মমতার

0
খড়গ্রাম: দেশের সর্বোচ্চ আদালত যখন নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যকে ধাক্কা দিল, ঠিক তখন মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের নির্বাচনি জনসভা থেকে ফের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিকে উসকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী...

TMC | নির্বাচনি আচরণবিধির পরোয়া নেই, সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন তৃণমূলনেত্রী

0
হরিশ্চন্দ্রপুর: নির্বাচনি আচরণবিধি চলছে। কিন্তু তা তোয়াক্কা করছেন না তৃণমূলের ব্লক সভানেত্রী তথা জেলা পরিষদের সদস্য। নির্বাচনি আচরণবিধি চলাকালীনই তৃণমূলের(TMC) হরিশ্চন্দ্রপুর-১ (বি) সাংগঠনিক ব্লকের...

Most Popular