আলিপুরদুয়ার: এ কি নদী নাকি কয়েক কিমি ধরে বিছিয়ে থাকা ভাগাড়? জয়ন্তী নদীর খাত দেখলে এখন এই কথা মনে হতে বাধ্য। শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল জয়ন্তীর মহাকালধামে। শনিবার শিবরাত্রির অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু জয়ন্তী নদীখাতে জঞ্জাল এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। জলের বোতল, কাগজের থালা প্লাস্টিকের গ্লাস, ক্যারিব্যাগ, উচ্ছিষ্ট খাবার, অব্যবহৃত সবজি থেকে শুরু করে মদের বোতল বা আধপোড়া জঞ্জাল, কী নেই সেই নদীখাতে! নদীর মাঝে এসব যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকায় ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীরা।
যাতে সাফাইয়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে হয়, সেজন্য বন দপ্তর এবছর কঠোর নিয়ম চালু করেছিল। ভাণ্ডারার আয়োজকদের কাছ থেকে সিকিউরিটি মানি হিসেবে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা জমা করার পরেই বন দপ্তর অনুমতি দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, যদি কোনও ভাণ্ডারার আয়োজক নদীর খাত অপরিষ্কার রেখে চলে যায়, তবে তাদের জমা রাখা সেই টাকা তারা আর ফেরত নাও পেতে পারে। এহেন কঠোর পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল, পরিবেশ জঞ্জালমুক্ত রাখা। কিন্তু কে শোনে কার কথা? বন দপ্তরের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জঙ্গলের পথে গত কয়েকদিন দাপিয়ে বেড়িয়েছে মোটরবাইক। তেমনি পুণ্যার্থী থেকে শুরু করে সেখানে বেড়াতে আসা মানুষজন নদী ও জঙ্গলের কোর এলাকার পরিবেশের ক্ষতি করেছেন বুঝে বা না বুঝেই। জয়ন্তীর রেঞ্জ অফিসার আনন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘নদীখাতে কোথাও জঞ্জাল জমে রয়েছে কি না, সেটা শীঘ্রই খতিয়ে দেখে তা সাফ করা হবে।’
সোমবার জয়ন্তীর বড় মহাকাল ও ছোট মহাকালে যাওয়ার পথেই দেখা গিয়েছে, নদীখাত কার্যত ঢেকে গিয়েছে আবর্জনায়। নদীর জলেও জঞ্জাল ভাসছে। একটা জায়গায় কয়েকটি বস্তায় কয়েক হাজার খালি জলের বোতল ভরে রাখা হয়েছে। দেখে মনে হল, সেগুলো হয়তো সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু সে তো জঞ্জালের একাংশ মাত্র। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এমন আরও অনেক আবর্জনা। কোথাও আবার জঞ্জাল পোড়ানো হয়েছে। সেই ছাই উড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু আধপোড়া অংশ দূষণ বাড়াচ্ছে। ভাণ্ডারার আয়োজকরা তো তাঁবু খুলে নিয়েছে। তবে এখনও কয়েকটি কাঠামো পড়ে রয়েছে।
এমনই এক ভাণ্ডারার আয়োজক পুলক মিত্র দাবি করেছেন, ‘আমরা জঞ্জাল নিয়ে শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম। জঞ্জাল সেখান থেকে নিয়েও এসেছি। কিন্তু পুণ্যার্থীদের অনেকে বোতল ও ক্যারিব্যাগে ফুল ও পুজোর সামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসব জঞ্জাল নদীখাতে ফেলায় দূষণ হতে পারে।’
ওই নদীতেই বন্যপ্রাণীরা জলপান করতে আসে। কিন্তু গত কয়েকদিন যেভাবে পুণ্যার্থীরা নদীর দখল নিয়েছিলেন, তাতে বুনোরা সেখানে ভিড়তেই পারেনি। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সম্পাদক ত্রিদিবেশ তালুকদার বলেন, ‘যেভাবে কয়েকদিন ধরে বন ও বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়েছে জয়ন্তীতে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ডুয়ার্সবাসীকে এর ফল ভুগতে হবে।’ পরিবেশকর্মী জীবনকৃষ্ণ রায়ও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।