রায়গঞ্জ: এইচআইভি আক্রান্তের তালিকায় একলাফে ভারতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে উত্তর দিনাজপুরের নাম। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দেওয়া তথ্য এরকমই। ২০২২-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় ২১৭ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু একদশকের পরিসংখ্যান শুনতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। ২০১০-২০২২ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যানে আশঙ্কায় জেলাবাসী। বাংলার জন্য আরও আতঙ্ক রয়েছে। তালিকার ১ নম্বরে উত্তরপ্রদেশের নয়ডা। ৩ নম্বরে হরিয়ানার পানিপত। ৪ নম্বরে বাংলার উত্তর ২৪ পরগণা। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক যা হিসেব দিলেন, তাতে মালদা এবং মুর্শিদাবাদের অবস্থাও ভালো নয়। তারা তালিকার উপরের দিকেও।
কিন্তু উত্তর দিনাজপুরে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, উত্তর দিনাজপুরের ভৌগলিক অবস্থান এবং আর্থিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী। জেলার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ১২ নম্বর ও ২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক, সড়কের ধারে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে পতিতালয়। ফলে ট্রাকচালকরা সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়াও ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের মাধ্যমেও এইডস ছড়াচ্ছে। উত্তর দিনাজপুরের এক স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, সচেতনতা বাড়ানোর জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে শিবির করা হচ্ছে। তবে জেলার জনসংখ্যা নিরিখে খুব কম পরিমাণ লোক এখনও পর্যন্ত রক্তের নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে। তাই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের আশঙ্কা, আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ডিস্ট্রিক্ট এইডস প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ইউনিটের এক আধিকারিক জানান, পরীক্ষার কিট না থাকায় রক্ত নেওয়া যায়নি। কিটের জন্য ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ন্যাকো) কাছে আবেদন করা হয়েছে। ফলে জেলার যৌনকর্মীদের রক্ত পরীক্ষা আটকে রয়েছে। উত্তর দিনাজপুর আটটি ইন্টিগ্ৰেটেডে কাউন্সিল অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার (আইসিটিসি) রয়েছে। গত বছরে মোট ১১ হাজার ৮৯ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। ইসলামপুরে পরীক্ষা করতে এসেছেন ১৯১ জন। রায়গঞ্জ মেডিকেলে ১০৯ জন পরীক্ষা করিয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে জেলায় এইডস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক পূরণ শর্মা বলেন, ‘বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এইচআইভি নিয়ে কাজ করছে। এভস আক্রান্ত নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর তৎপর।’ উত্তর দিনাজপুর জেলায় এইডস আক্রান্ত এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, ‘কিভাবে এই রোগ বাসা বেঁধেছিল তা এখনও অজানা। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। তবে এআরটি’র স্বাস্থ্যকর্মীরা ভরসা জুগিয়েছে। রোজ একটা করে টিএলডি ওষুধ খাচ্ছি। প্রতিবেশীরাও পাশে দাঁড়িয়েছেন।’
রায়গঞ্জ মেডিকেলের চিকিৎসক অরবিন্দ রায়ের বক্তব্য, ‘এইচআইভি এক ধরনের ভাইরাস। যা শরীরে সংক্রমিত হয় রক্তের মাধ্যমে বা অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গের কারণে। এইডস হল এইচআইভির সংক্রমণ অতিরিক্ত বৃদ্ধির পর্যায়ে। শরীরে সংক্রমণ ক্ষমতা কমে, অন্যান্য রোগগুলি দ্রুত বাড়তে শুরু করে।’ কিন্তু কীভাবে এর থেকে মুক্তি সম্ভব? চিকিৎসক দিলীপকুমার গুপ্তার মতে, ‘সঠিক ও নিয়মিত ওষুধ শরীরে এইচআইভি ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত রুখে দেয়। ওষুধ না খেলে চরম পরিণতি হবে।’