শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: জেদ, অধ্যবসায় ও সংকল্পের ত্র্যহস্পর্শে রিল ও রিয়েলের আসমান জমিন ফারাক ঘোচানোও সম্ভব। ‘টুয়েলভথ ফেল’ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপতের আইপিএস হওয়ার কাহিনীর ভিডিও তৈরি করে ভবিষ্যতের হাজারো উমেশদের সেকথাই জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ। ৪ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ওই ভিডিও রবিবার পুলিশের পক্ষ থেকে ইউটিউব, ফেসবুকের মতো নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট হতেই তা নিমেষের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিও বা শর্ট তথ্যচিত্রটি সম্প্রতি সুপারহিটের তকমা পাওয়া বিধুবিনোদ চোপড়ার ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমার মুখ্য চরিত্র মনোজকুমার শর্মার জীবন সংগ্রামের সঙ্গে খান্ডবাহালে উমেশ গণপতের হুবহু লড়াইয়ের মিলিত খণ্ড কোলাজ। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার বলছেন, ‘আমি আবারও বলছি অসম্ভব বলে কোনও কিছু নেই। শুধু দরকার কিছু করে দেখানোর ইস্পাত কঠিন মানসিকতা ও নিষ্ঠা।’
রাজ্য পুলিশের ভিডিওটি আসলে প্রেরণামূলক। দ্বাদশের পরীক্ষায় প্রথমে ফেল করেও হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান পুলিশ অ্যাকাডেমির প্রেস্টিজিয়াস অলিন্দেও যে পৌঁছোনো যায় তা ২০১৫ সালের আইপিএস অফিসার উমেশ বৃত্তান্তের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এতে মহারাষ্ট্রের কৃষি অধ্যুষিত গ্রাম মাহিরাভানির বাসিন্দা পুলিশ সুপারের বাবা গণপত খান্ডবাহালে ও রত্নগর্ভা মা যমুনা খান্ডবাহালেও ছেলের হার না মানা মনোভাবের কথা তুলে ধরেছেন। কঠোর পরিশ্রমই যে জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠি, সেকথাই তাঁরা বলেছেন দৃপ্ত কণ্ঠে।
পুলিশ সুপারের জবানিতে রয়েছে, ‘আর পাঁচজনের মতো টুয়েলভের বোর্ড পরীক্ষায় ফেল করে আমার মনোবলও ভেঙে যায়। এরপর বাড়িতে বাবার সঙ্গে জমিতে চাষবাস ও নিজেদের গোরু, মোষ দেখাশোনার কাজ শুরু করি। তখন মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষির ওপর একটি ডিপ্লোমা করে ফেলি। এর দু’বছর পর মনে হয়েছিল টুয়েলভ ফেল এর যে ট্যাগ আমার জীবনে রয়েছে তা থেকে মুক্ত হতে হবে। যে কারণে ফের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি।’
এরপরের কাহিনী একবগ্গা উমেশের শুধুই এগিয়ে চলার। মাস্টার ডিগ্রিও হাসিল করে নেন তিনি। তাও সেই ইংরেজি বিষয় নিয়েই, যাতে তিনি দ্বাদশে প্রথমবার ফেল করেন।
পুলিশ সুপার জানাচ্ছেন, তাঁর টুয়েলভথ ফেলের পর্ব থেকে আইপিএসের কঠিন বৈতরণি পেরোনোর পথে ১২ বছরের একটি দীর্ঘ অধ্যায় রয়েছে। সে সময় কৃষিকাজ, দুধ বিক্রির পাশাপাশি তিনি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন স্রেফ পড়াশোনাতেই। প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট করেছেন সমসাময়িক নানা বিষয়ের ওপর। অবশেষে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য হয়েছে।
হেরে গিয়েও দাঁত কামড়ে লড়াইয়ের ময়দানে পড়ে থেকে নতুন যুদ্ধে শামিল হওয়াকে ‘রিস্টার্ট’ বলে। যে কারণে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের ভিডিওর নামকরণও করা হয়েছে ‘অ্যানাদার টুয়েলভথ ফেল রিস্টার্ট’ হিসেবে। আসল হিরোরা দ্যুতি ছড়ান এমন খান্ডবাহালে উমেশ গণপতদের মাধ্যমেই।