পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: সন্তান দত্তক নেওয়ার আট বছর পর আইনি প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি হল মঙ্গলবার। এদিন জেলা শাসক শামা পারভিনের হাত ধরে কলকাতার (Kolkata) দুই নিঃসন্তান দম্পতিকে তাঁদের দুই ছেলেমেয়ের (children) দত্তকের আইনি অধিকার দেওয়া হল। আইনি স্বীকৃতি পেয়ে দুই সন্তানের বাবা মা খুশিতে মেতে ওঠেন।
কলকাতার এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ২০১৫ সালে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের কেরানিপাড়া থেকে ৮ মাসের এক কন্যা সন্তানকে দত্তক নিতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
অন্যদিকে, কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজার একই সময়ে এক পুত্রসন্তানের জন্য আবেদন করেছিলেন। তারপর ২০১৬ সালে নিজেদের কাছে সেই ছেলে ও মেয়েকে দুই মাসের জন্য রাখার অনুমতি পান দুই দম্পতি। কিন্তু কে জানত যে কেরানিপাড়ার বিমলা শিশু গৃহ থেকে সন্তানদের দত্তক নিয়েছিলেন সেটিকে শিশু পাচারের অভিযোগে রাজ্য পুলিশের সিআইডি সিল করে দেবে।
এক নিঃসন্তান বাবা বলেন, ‘নিজেদের কাছে মাত্র দু’মাস রাখার নিয়ম ছিল। কী করব বুঝেই উঠতে পারছিলাম না। জেলা আদালতে গিয়েও কিছুই হয়নি। ভয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়ে সময় নষ্ট হয়েছিল। কিন্তু আদালত থেকে জেলা শাসকদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জানতে পেরে গত বছর সেপ্টেম্বরে আবেদন করি। আজ নিজের মেয়েকে নিজের বাবার অধিকারে পাওয়ার স্বীকৃতি পেয়ে আমরা খুশি।’
আরেক সন্তানের বাবা বলেন, ‘যে হোম থেকে দত্তক নিয়েছিলাম সেই স্পেশালাইজড অ্যাডপশন এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি কৃতজ্ঞ জেলা শিশু সুরক্ষা বিভাগের কাছে যে তারা অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমাদের কাগজ বের করতে পেরেছে। নইলে আজও আইনি স্বীকৃতি পেতাম না ছেলের। ’
২০১৬ সালে দুই ছেলেমেয়ের বয়স ছিল ৮ মাস। এখন প্রায় ৮ বছর। আইনি অধিকার না মিললে কী হবে ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন দুই মা। পরে অধিকারের কাগজ হাতে পেয়ে যারপরনাই খুশি তাঁরা।
এদিন জেলা শাসকের ঘরে দুই নিঃসন্তান দম্পত্তিকে ডেকে সব কথা শোনা হয়। কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে সাহায্য করেন অতিরিক্ত জেলা শাসক (সমাজকল্যাণ) তেজস্বী রানা ও জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদীপ ভদ্র। জেলা শাসক বলেন, ‘আমি খুশি দুই নিঃসন্তান দম্পত্তিকে তাদের ছেলেমেয়ের উপর দত্তকের আইনি অধিকার দিতে পেরে।’