মেখলিগঞ্জ: আর দশটা মহকুমা হাসপাতালের মতো মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালেও রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। এই হাসপাতালের সঙ্গে মাছ বাজারের অদ্ভুত এক সাদৃশ্য রয়েছে। মাছ বাজারে যেমন ক্রেতাদের ধরে টানাটানি শুরু হয় তেমনই এই হাসপাতালেও একই ছবি দেখা যায়। মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে রোগী আসতেই চিকিৎসক ও বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ল্যাবরেটরির দালালরা তাঁদের ধরে টানাটানি শুরু করে। এনিয়ে ভুক্তভোগীরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দ্রত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে তাঁরা সরব হয়েছেন।
মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডা.তাপসকুমার দাস বলেন, ‘আমাদের নজর এড়িয়ে দালালরা হাসপাতালে আসছে। কোনও দালাল রোগীকে উত্যক্ত করলে বা তাঁর কাছ থেকে টাকা চাইলে অভিযোগ জানাতে হবে। কীভাবে অভিযোগ জানাতে হবে সে বিষয়ে লিখে হাসপাতালের দেওয়ালে পোস্টার সাঁটা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। কয়েক মাস আগে আমরা কয়েকজন দালালকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলাম।’
দালালদের দৌরাত্ম্যে রোগীরা অবশ্য ব্যাপক ক্ষোভ জানিয়েছেন। গোপাল বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক। আত্মীয়কে নিয়ে তিনি হাসপাতালের সরকারি চিকিৎসককে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় বিভিন্ন যুবক যুবতি এসে রোগের বিবরণ জিজ্ঞাসা করতে শুরু করে দেয়। তারপর যুবক যুবতিরা জানায় হাসপাতালের থেকে প্রাইভেটে চিকিৎসক দেখালে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে। অভিযোগ, এভাবেই রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়। তাঁরা মানসিকভাবে দুর্বল হলে রোগীর কথা ভেবে প্রাইভেটে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এটা শুধু গোপালেরই কথা নয়। বেশির ভাগ রোগীকেই এভাবে টার্গেট করা হয়।
বিভিন্ন ল্যাবরেটরির দালালরা আরও বেশি সক্রিয়। বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি, আলট্রাসোনোগ্রাফি সহ নানা পরীক্ষার কথা লিখে দেন। বেশির ভাগ পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালেই হওয়ার কথা। কিন্তু হাসপাতালে চত্বরে ঢুকে আবার কেউ কেউ সরকারি চিকিৎসকদের চেম্বারের বাইরে ওঁৎ পেতে থাকে। প্রেসক্রিপশনে কোনও পরীক্ষা লেখা আছে কিনা তা তারা দেখে নেয়। যদি প্রেসক্রিপশনে তা লেখা থাকে তবে তারা তাকে নিজেদের ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে দালালরাজের বিষয়ে হাসপাতালের কর্মীরাও অবগত। মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘চিকিৎসক ও ল্যাবরেটরির কমপক্ষে ৫০ জন দালাল রয়েছে। তারা বিভিন্ন চিকিৎসকদের কাছ থেকে রোগী প্রতি ১০০ টাকা এবং ল্যাবরেটরির দালালরা পরীক্ষা অনুযায়ী ১০০ থেকে ৩০০ টাকাও পায়।’ নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘আমরা আরও সক্রিয় হব। যদি কেউ নির্দিষ্ট করে দালালদের নামে অভিযোগ জমা করে তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’