কুমারগ্রাম ও শালকুমারহাটঃ লোকসভা ভোটের প্রার্থীরা বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন। পুজো দিচ্ছেন নেতারাও। দিনের শুরুতে পুজো দিয়ে ভোটের প্রচারে যাচ্ছেন তাঁরা। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে এখন এটাই ‘ট্রেন্ড’। ঘাস ও পদ্ম, এই দুই শিবিরের প্রার্থীদের মধ্যে পুজো দেওয়া নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। যে মন্দিরে প্রকাশ চিকবড়াইক পুজো দিচ্ছেন সেই মন্দিরেই পুজো দিয়ে মনোজ টিগ্গাও ভোট প্রচার সারছেন। কিন্তু কেউই মন্দিরের পুরোহিতদের পরিবার কেমন আছে সেই খোঁজ নিচ্ছেন না। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই পুরোহিত মহলে। অথচ এই পুরোহিতরাই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে ফুল, ফল নিবেদন করে প্রার্থীদের মঙ্গলকামনা করছেন।
কুমারগ্রাম চা বাগান শিব মন্দিরের পূজারি শোভিত তিওয়ারি কথা প্রসঙ্গে জানান, ‘উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূট জেলায় আমার আদি বাড়ি। রুজিরুটির টানে এখানে পরিবার নিয়ে আছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা মন্দিরের যাবতীয় কাজকর্ম করেই সময় কেটে যায়। মালি নেই। তাই একা হাতে সবকিছু করতে হয়। কোম্পানির থেকে টাকাপয়সা পাই না। শ্রমিকদের দানেই অভাবের সংসার কোনওরকমে টেনেটুনে চালাচ্ছি। কিছুদিন আগে মনোজ এবং প্রকাশ দুজনেই এসে মন্দিরে পুজো দিয়ে শিবের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন। ব্যস্ততার মাঝে নিজের কথা বলার খুব একটা সুযোগ হয়নি। তবুও প্রকাশ চিকবড়াইকের কাছে পুরোহিত ভাতা এবং মালির ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।’
নিউল্যান্ডস চা বাগানের রাধামাধব মন্দিরেও প্রকাশ ও মনোজ দুজনেই পুজো দিয়ে ভোটের প্রচার সেরেছেন। সত্তরোর্ধ্ব পুরোহিত গঙ্গাধর তিওয়ারি নিত্যপুজোর দায়দায়িত্ব সামলান। কথা হচ্ছিল তাঁর পুত্রবধূ কিরণদেবী তিওয়ারির সঙ্গে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কী আর বলব। প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। আমরা সবার মঙ্গলকামনায় পুজোআচ্ছা নিয়েই থাকি। এছাড়া আমাদের বিকল্প উপার্জনের পথ নেই। অথচ আমাদের অভাব-অভিযোগের খবর কেউই নেন না। পুরোহিত ভাতা তো দূর অস্ত, একাধিকবার আবেদনের পরও শ্বশুরমশাই বার্ধক্য ভাতাও পাননি। অভাবের সংসার। ঠিকঠাকভাবে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও দিতে পারি না। তাই উচ্চশিক্ষালাভে মেয়েকে এলাহাবাদে ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।
একইভাবে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে কুমারগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পাগলারহাট কালী মন্দিরে এবং আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের শালকুমারহাটে শতবর্ষ প্রাচীন কার্জি পরিবারের কালী মন্দিরে পুজো দেন মনোজ টিগ্গা। একই পথের পথিক প্রকাশ চিকবড়াইকও। যদিও প্রকাশের পুজোর দিন শালকুমারহাটে পুরোহিতের ভূমিকায় ছিলেন আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। মন্দিরের নিত্যপূজারিনী কল্পনা রায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ৩০ বছর ধরে পুজোর দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। কল্পনার আক্ষেপ, ঘাসফুল ও পদ্মফুলের প্রার্থীরা পুজো দিয়ে আশীর্বাদ নিলেও তাঁর পরিবার কেমন আছে সেসবের খোঁজখবর নেননি। তিনি বলেন, আমি তো ব্রাহ্মণ পুরোহিত নই। তাই পুরোহিত ভাতা পাব না। কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তো পেতে পারি। সেটাও পাচ্ছি না। পেট চালাতেই তাই দুই ছেলে এখন কেরলের পরিযায়ী শ্রমিক। আবেদন জানিয়েও মেলেনি সরকারি ঘর।
পাগলারহাট কালীবাড়ির পুরোহিত শংকরপ্রসাদ রায় বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে পুরোহিত ভাতা পাচ্ছি। কমবেশি সব জায়গাতেই পুরোহিতদের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো নয়। অভাব অনটনে চলতে হয়। তাই এই জীবিকার সঙ্গে যুক্তদের নিয়ে ভক্ত থেকে শুরু করে নেতা, মন্ত্রী এমনকি সরকারেরও আরও বেশি করে ভাবা উচিত।’ এব্যাপারে প্রার্থী এবং নেতাদের বক্তব্য মেলেনি।