প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম। বিজেপির দলীয় চিহ্নেও রয়েছে পদ্মফুলের অবস্থান। এমনকি সদ্যসমাপ্ত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে পৌরহিত্যের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বুকেও দেখা গিয়েছে পদ্মফুলের ব্রোচ। এবার আসন্ন সংসদের বিশেষ অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকারি নির্দেশে আধিকারিক এবং কর্মচারীদের জন্য লাঘু নয়া ‘ড্রেস কোড’-এ পদ্মফুলের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠল।
কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন সংসদ ভবনে আয়োজিত সংসদীয় অধিবেশন পর্বে সংসদ ভবনের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত কর্মী, মার্শাল, মহিলা কর্মীদের নতুন পোশাক বা ‘ড্রেস কোড’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এতদিন তাঁরা সাফারি সুট পড়তেন৷ এবার থেকে সংসদে কর্মরত পুরুষ কর্মীদের জন্য থাকছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি (নিফট)-র ডিজাইনার কুর্তা, খাকি ট্রাউজার এবং জ্যাকেট৷ জ্যাকেটের ওপরে থাকবে গোলাপি রংয়ে আঁকা ‘পদ্ম ফুল’৷ এর সঙ্গে থাকছে মণিপুরী টুপি৷ সংসদ ভবনের মহিলা কর্মী, আধিকারিকদের জন্য থাকছে শাড়ি ও জ্যাকেটের ব্যবস্থা, সেখানেও থাকবে ‘পদ্ম ফুল’৷ সংসদের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত যাবতীয় কর্মী ও আধিকারিকদের জন্য থাকছে ক্যামোফ্লেজ ইউনিফর্ম৷ সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা এবং রাজ্যসভার সঙ্গে জড়িত কর্মী, আধিকারিকদের একই ধরণের পোশাক পড়তে হবে৷ পোশাকের মধ্যে থাকবে ভারতীয় পরম্পরার ছাপ৷ সংসদের ক্যান্টিনের মেনুতেও আনা হবে অনেক পরিবর্তন, দাবি সরকারি সূত্রে৷
তাত্পর্যপূর্ণ হল, সংসদের কর্মী, আধিকারিকদের জন্য তৈরি নতুন ড্রেসের মধ্যে ‘পদ্ম ফুল’-এর ব্যবহারকে ভালোভাবে নিচ্ছে না বিরোধী শিবির৷ এই মর্মে সরকারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস৷ শতাব্দী প্রাচীন দলের কেন্দ্রীয় নেতা রশিদ আলভির অভিযোগ, বিজেপি এবার সংসদকে নিয়ে রাজনীতি করছে৷ একই সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূল সাংসদদের গলাতেও৷
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের দাবি, ‘গোটা ঘটনাটা বিজেপির অত্যন্ত নিম্নমানের মানসিকতার পরিচয় বহন করছে৷ আসলে মোদিবাবু ভয় পেয়েছেন, তাঁর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে৷ তাই পদ্মে ভর দিয়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা৷ কিন্তু এতে কোনও লাভ হবে না৷’ সিপিএম সাংসদ এ এম আরিফ প্রশ্ন তুলেছেন মণিপুরী টুপির ব্যবহার নিয়ে। তাঁর কথা, ‘আজও মণিপুর জ্বলছে৷ আজও মোদি মণিপুর নিয়ে কোনও সদর্থক বার্তা বা পদক্ষেপ নিতে পারেননি৷ এখন কী মণিপুরী টুপি পড়িয়ে সেই ক্ষতে মলম দিতে চান প্রধানমন্ত্রী? আসলে তিনিই মণিপুরকে টুপি পড়িয়েছেন।’
এদিকে কেন্দ্রীয় সূত্রে এও জানা গিয়েছে, শেষ মুহূর্তে সরকারি সূচিতে বড়রকম কোনও রদবদল না হলে গণেশ চতুর্থীর দিন ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন সংসদ ভবনে বসবে সংসদীয় অধিবেশন৷ ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে পাঁচদিনের বিশেষ সংসদীয় অধিবেশন৷ প্রথমদিন পুরোনো সংসদ ভবনেই সংসদের অধিবেশন বসবে৷ পরেরদিন গণেশ চতুর্থী৷ গোটা দেশে ধূমধাম করে পালিত হওয়া সেই গণেশ চতুর্থীর দিন থেকেই নতুন সংসদ ভবনে পুরোদস্তুর সংসদীয় অধিবেশন শুরু করা হবে৷ গত ২৮ মে মহা আড়ম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে নতুন সংসদ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও আজ পর্যন্ত সেখানে কোনও অধিবেশন বসেনি৷ এবার গণেশ চতুর্থীর দিনই সেই অধিবেশন শুরু হবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে৷