অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: সামান্য একটি রিচার্জেবল লাইট নিয়ে ঝামেলা। তার জেরে ছেলের বিরুদ্ধে বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। ওই বৃদ্ধার সোয়েটার সহ নানা সামগ্রী পুড়িয়েও দেওয়া হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত নিয়ে ওই বৃদ্ধা বর্তমানে ময়নাগুড়ি (Maynaguri) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গোটা ঘটনাটি জানিয়ে তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে ময়নাগুড়ি থানার আইসি তমাল দাস জানিয়েছেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ময়নাগুড়ি ব্লকের বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর পুঁটিমারি খালপাড়া এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
মঙ্গলবার হাসপাতালে বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মালতী বর্মন নামে ওই বৃদ্ধা বললেন, ‘বড় ছেলে আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। শরীরে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা প্রতিমা রায় বলেন, ‘বৃদ্ধার ছেলেরা আগেও তাঁর সঙ্গে বহুবার এমন কাজ করেছেন।’ সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা তথা ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মনোজ দেবনাথ বললেন, ‘ওই বৃদ্ধার ছেলেরা যা করেছেন তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ অভিযোগ অস্বীকার করে বৃদ্ধার বড় ছেলে যোগেন বর্মনের বক্তব্য, ‘বয়সজনিত কারণে মা উলটোপালটা বলছেন। মোটেও তাঁকে মারধর বা বাড়ি থেকে বের করিনি।’ যোগেনের স্ত্রী চারুবালা বললেন, ‘শাশুড়ি যে কখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন তা খেয়ালই করিনি।’ শীঘ্রই মালতীকে তাঁরা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন বলে যোগেন জানিয়েছেন।
এদিন সকালে মালতীর একটি রিচার্জেবল লাইট নষ্ট হয়ে যায়। অভিযোগ, সেটি খারাপ হওয়ার পিছনে যোগেনের মেয়ে পল্লবীর হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করে মালতী তাকে মারধর করেন। পল্লবী কাঁদতে কাঁদতে যোগেনকে গিয়ে ঘটনাটি জানায়। অভিযোগ, এরপরই যোগেন তাঁর বৃদ্ধা মাকে লাঠিপেটা করে বাড়ির বাইরে বের করে দেন। ওই বৃদ্ধার সোয়েটার সহ অন্যান্য সামগ্রী পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বৃদ্ধা একটি টোটোয় চেপে ময়নাগুড়ি থানায় যান। তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশকর্মীরা বুক, পা সহ শরীরের নানা অংশে আঘাত থাকা ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
বৃদ্ধার দুই ছেলে। তিনি গত কয়েক মাস ধরে ছোট ছেলে ভবেশের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করতেন। দাদার সুরেই ভবেশের বক্তব্য, ‘বয়স হওয়ায় মা অনেক সময়ই নানাজনের সঙ্গে ঝামেলা করেন।’ এলাকাবাসীরা অবশ্য ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা প্রফুল্ল রায়ের কথায়, ‘ছেলেরা মাঝেমধ্যেই ওই বৃদ্ধাকে মারধর করেন। তাঁকে মারধর করে বাড়িছাড়া করাটা মোটেও ঠিক হয়নি।’ আরেক প্রতিবেশী মেনকা রায়েরও একই বক্তব্য।