চ্যাংরাবান্ধা: সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে মুখ্যমন্ত্রী যখন দুয়ারে বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছেন। তখনও কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থেকেই গিয়েছে। আর এই সমন্বয়ের অভাবে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হল রানিরহাটের এক পরিবারকে। পুলিশ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলির কারণে ২১ দিনের সন্তানহারার যন্ত্রণা বুকে নিয়ে মৃত সন্তানের দেহ আগলে শনিবার সারারাত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকতে হল বাবা-মাকে। শেষমেশ রবিবার দুপুরে শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাথাভাঙ্গা মর্গে পাঠানো হয়। শনিবার রাতের এই ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে মেখলিগঞ্জ ব্লকের রানিরহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের বোকনাবান্ধা কাউয়ারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রজত রায়ের ২১ দিনের এক শিশুর শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এরপর অভিভাবকেরা চিকিৎসার জন্য ওই শিশুকে চ্যাংরাবান্ধা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। রাত সোয়া ১১টা নাগাদ তাঁরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছোলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়ে দেন, শিশুটি আগেই মারা গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্তের পরেই শিশুটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সেজন্য খবরও দেওয়া হয় মেখলিগঞ্জ থানায়। কিছুক্ষণ বাদে পুলিশ চ্যাংরাবান্ধা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে পৌঁছোয়। কিন্তু কী হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলেন না। এভাবে দীর্ঘসময় কেটে যাওয়ার পর মৃত শিশুর পরিবারের লোকজন দেহটি বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। এরপর তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয়, বিষয়টি পুলিশ দেখছে। কারণ ময়নাতদন্তের বিষয়টি তাদের দেখার নয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা নাকি হাসপাতালের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। এতে কার্যত শিশুর দেহকে আগলে রাত পাহারা দিতে হয় বাবা রজত রায় সহ পরিবারের অন্যদের। এভাবে সারারাত কেটে যাওয়ার পর তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কী করবেন বুঝতে না পেরে এর ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। কারণ শিশুর দেহ কেউই ছাড়ছিল না, আবার ময়নাতদন্তের জন্যও কোনও ব্যবস্থা হচ্ছিল না। অপেক্ষা করতে করতে রবিবার দুপুর প্রায় ১টা বেজে যায়। শেষমেশ মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশের উপস্থিতিতেই দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মাথাভাঙ্গা মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
মেখলিগঞ্জের বিএমওএইচ ডাঃ অম্বুজ কুমার ঠাকুর অবশ্য জানিয়েছেন, শিশুটি খুব ছোট ছিল। তাই পরিবারের লোকজনেরা ময়নাতদন্ত করাতে চাইছিলেন না। এই জন্য কিছুটা সময় লেগে গিয়েছে। মেখলিগঞ্জ পুলিশের এসডিপিও অরিজিত পাল চৌধুরী জানান, খবর পেয়েই পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছোয়। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। বাকি বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ জে বৈদ্যর বক্তব্য, ‘আমি সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই কাজ করেছি।’