সজল দে ও শুভ্রজিৎ বিশ্বাস, মেখলিগঞ্জ: চাষের জমির উপর দিয়ে গোরু নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। আর তার জেরে বেঘোরে প্রাণ দিতে হল এক মহিলাকে। অভিযোগ, বছর ৫৬-র সাহেবা বিবিকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে গোরু পাচারকারীরা। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয় নিজতরফ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২৫ পয়স্তির মফিজুলেরটারি এলাকায়।
রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান মেখলিগঞ্জ থানার (Mekhliganj news) ওসি রাহুল তালুকদার ও সার্কেল ইনস্পেকটর পূরণ রাই। মেখলিগঞ্জ থানা সূত্রে খবর, মৃতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন আলতাফ হোসেন ও সিপাই মহম্মদকে আটক করা হয়েছে।
মৃতার ছেলে শাহজাহান মহম্মদ জানিয়েছেন, চাষের জমি দিয়ে নিয়মিত গোরু নিয়ে যাওয়া হয় পাচারের জন্য। জমি বাঁচাতে তাই রাতপাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। মঙ্গলবার রাতপাহারার সময় তিনটি গোরু আটক করেন তাঁরা। বুধবার সকালে গোরুগুলি পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়। আর তারপর থেকেই হুমকি দিতে থাকে পাচারকারীরা। তাঁর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ আলতাফ হোসেন, মোজাফর হোসেন এবং সিপাই মহম্মদ তাঁদের উপর চড়াও হয়। তাঁর মা সাহেবা বিবির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয় এবং স্ত্রীকেও মারধর করা হয়। চিকিৎসার জন্য তাঁদের মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে সাহেবা বিবিকে জলপাইগুড়ির সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে (Jalapiguri super speciality hospital) রেফার করা হয় এবং সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে, অভিযুক্ত আলতাফ হোসেনের বাড়িতে কোনও সদস্য না থাকায় তাঁদের পালটা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী সুভাষচন্দ্র পোদ্দার বলছেন, ‘পাচারের গোরু আটক করায় যেভাবে একজনের প্রাণ গেল তাতে আমরা আতঙ্কিত। পুলিশ-প্রশাসনকে পাচার বন্ধ করতে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।’
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয়দের একাংশ। মহম্মদ আতাবুলের অভিযোগ, ‘এত বড় ঘটনার পর থানায় অভিযোগ জানানো হলেও রিসিভ কপি যেমন দেওয়া হয়নি, তেমনই সকালে অভিযোগ জমা দেওয়ার পর সারাদিন পুলিশ আসেনি। রাতে সাহেবা বিবি মারা যাওয়ার পর চাপে পড়ে পুলিশ সক্রিয় হয়।’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ফতেমা বিবির স্বামী মহম্মদ দুলালও পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘এই এলাকা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গোরু পাচার চলছে। পুলিশ সক্রিয় থাকলে এরকম ঘটনা ঘটত না।’
শুক্রবার বিকালে মৃতার বাড়িতে আসেন মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পম্পা বর্মন রায়। তিনিও গোরু পাচার বন্ধে পুলিশ ও বিএসএফকে সক্রিয় হওয়ার আর্জি জানান। কোচবিহারের পুলিশ (Cooch behar police) সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, গোরু নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনায় দু’পক্ষের দুজন করে আহত হয়েছে। দু’তরফেই থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। ময়নাতদন্তের পর এদিন সন্ধ্যায় সাহেবার দেহ বাড়িতে আনা হয়। ঘটনায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেখানে বিরাট পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।