কালিয়াগঞ্জঃ ‘ফেল কড়ি, মাখো তেল।’ এই চিন্তাভাবনা মনে পোষণ করে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কালিয়াগঞ্জে ভোট দিতে আসা অথবা না আসার ভাবনাচিন্তা করছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের কাছে একটি ভোটের থেকে অনেক গুরুত্ব দিনের শেষে কাজ করে অর্থ উপার্জন। শুধুমাত্র কালিয়াগঞ্জ থেকেই প্রায় চার হাজার মানুষ পেটের তাগিদে বাইরের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, ‘কর্মসংস্থানের দিক থেকে অন্য রাজ্য এগিয়ে থাকলেও কেন পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ?’
কালিয়াগঞ্জের অনন্তপুর অঞ্চলের বুড়িডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা তনয় দে। রোজগারের তাগিদে স্ত্রী, ছোট সন্তান ও পরিবার ছেড়ে চেন্নাইয়ে মেট্রো লাইনে কাজ করছেন তনয়বাবু। তাঁর প্রশ্ন, ‘দুই পয়সা কামাই করব নাকি পকেটের টাকা খরচা করে ভোট দিতে যাব? বাংলায় কেউ কাজ দেয় না। সংসার তো চালাতে হবে। আমার মতো বাংলার অনেক মানুষ পেটের তাগিদে রাজ্যের বাইরে কাজ করছেন। চেন্নাই এত উন্নতি করলেও বাংলায় বেকারদের কোনও কাজ নেই। এর জন্য দায়ী কে?’
বাড়ির মানুষদের ফেলে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাইরের রাজ্যে কাজ করছেন হাজারো বাঙালি। বাড়ির লোকরা অসুস্থ হলেও ফোনেই তাঁদের অবস্থার কথা শুনতে হয়। বুকে এমন হাজারো যন্ত্রণা চেপে রেখে কাজ করতে হয় এই পরিযায়ী শ্রমিকদের। সেখানে, তাঁদের কাছে ভোটের উৎসব বালাই ছাড়া কিছুই নয়।’
কেরলে টাইলসের গোডাউনে কাজ করেন ধনকৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব রামপুরের বাসিন্দা মিঠুন রায়। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘লোকসভা ভোট দিতে বাড়ি গেলে যাতায়াত সহ অন্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা হবে। এই খরচ বহন করবে কে? যদি কেউ করে, তাহলে ভোট দিতে কেরল থেকে কালিয়াগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হব। নচেৎ নয়।’
পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবিকে সম্মতি জানিয়ে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আলি ইমরান রমজের কথায়, ‘কর্মসংস্থানহীন বাংলা। শুধুমাত্র উত্তর দিনাজপুর জেলার প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ পেটের তাগিদে ভিনরাজ্যে কাজ করছেন। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। এই মানুষগুলো প্রতিবার নিজেদের ভোটদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদের ভোটদানের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে৷ তাই, আমার দাবি, আমি জিতলে বেকারদের কর্মসংস্থান নিয়েই লোকসভায় আওয়াজ তুলব।’