মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: যেই সময় শহর শিলিগুড়ি উত্তাল কুকুর খুনের ঘটনায়, সেই সময় ঠিক অন্যরকম উদাহরণ তৈরি করলেন গুজরাটের এক ট্রাক চালক। শুধুমাত্র কয়েকটি কুকরছানাকে বাঁচাতে বাড়ি না ফিরে প্রায় চল্লিশ দিন ফুলবাড়ির ট্রাক টার্মিনালে থেকে গেলেন তিনি। মা হারা সদ্যোজাত সন্তানদের নিজের হাতে খাইয়ে পড়িয়ে চলার মতো অবস্থায এনে অবশেষে এলাকা ছাড়লেন তিনি। আর এই ঘটনায় রীতিমতো প্রশংসার বন্যা বয়ে গিয়েছে এলাকায়।
প্রায় দেড় মাসের কিছু আগে গুজরাট থেকে পাউডারজাত পণ্য নিয়ে আসামের গৌহাটিতে যান পেশায ট্রাকচালক সুনীল হেমতরাম কাপড়ি। ফিরতি পথে ভাড়া না মেলায় খালি ট্রাক নিযে ফুলবাড়ি এসে পৌঁছন তিনি। স্থানীয় একটি দোকানে বসেন চা খেতে। সেটাও প্রায় ৪১-৪২ দিন আগে। চায়ের দোকানে বসেই সুনীল জানতে পারেন আশপাশে ঘুরতে থাকা কুকুরছানাগুলির মা পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। সেই সময়ই শাবকগুলোকে বাঁচাতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাজকোটের এই বাসিন্দা। আস্তানা গাড়েন ফুলবাড়ি ট্রাক টার্মিনালে। এরপর প্রায় ৪০ দিন ধরে নিজে হাতেই কুকুরছানাগুলোকে খাইয়েছেন, ঘুম পাড়িয়েছেন সুনীল। প্রতিদিন নিজের রোজগার থেকে ওদের জন্য দুধ-বিস্কুট কেনে এনেছেন। নিজে নিরামিষভোজি হলেও মাংস কিনে এনে স্থানীয় দোকান থেকে রান্না করে কুকুরছানাদের খাওয়াতেন। টার্মিনালেরই এক পাশে শাবকগুলির জন্য খর ও কাপড় দিয়ে থাকার জায়গা তৈরি করে দেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা আনারুল ইসলামের বক্তব্য, যেভাবে ইনি কুকুরছানাগুলির সেবা করেছেন, তা ভোলার নয়। শাবকগুলি কিছুটা বড় হয়ে একা বেঁচে থাকার মতো শক্তি অর্জন করতেই শনিবার মাঝরাতের পর ফুলবাড়ি ছাড়েন এই ট্রাকচালক। অন্যদিকে শনিবার গভীর রাতে শিলিগুড়ির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কে বা কারা এক সঙ্গে অনেকগুলি পথকুকুরকে বিষ খাইয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। সেদিক থেকে নিঃসন্দেহে সুনীল এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করলেন সুনীল হেমতরাম কাপড়ি।