ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি: একদিকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে (Dumping Ground) দিনভর পুড়ছে আবর্জনা, আরেকদিকে সন্ধে হলেই দাউদাউ করে জ্বলছে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল (Baikunthapur Forest)। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তেই ধোঁয়ায় (Mysterious Fog) ভরে যাচ্ছে গোটা শহর। দিনদশেক ধরে এমন পরিস্থিতির উদ্রেক হলেও সমস্যা বেড়েছে রবিবার থেকে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের তথ্যই বলছে, গত কয়েকদিন শিলিগুড়ি (Siliguri) শহরে দূষণের (Air Pollution) মাত্রা বাড়ছে তরতরিয়ে। কিন্তু সমস্যার সমাধানে কারও কোনও হেলদোল নেই। আপাতদৃষ্টিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড এবং বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল থেকে ধোঁয়া ছড়াতে দেখা গেলেও কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে পুরনিগম ও বন দপ্তর। বরং একে অপরের ঘাড়ে দোষ ঠেলতেই ব্যস্ত।
সোমবার ভরদুপুরেও ইস্টার্ন বাইপাসের গা ঘেঁষে থাকা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে। কিছু জায়গায় আগুন নিভতেই গলগলিয়ে ওঠা ধোঁয়া বসন্তের হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের একপাশে লটারির টিকিট বিক্রি করতে করতে বারবার কাশছিলেন রতন শীল। রতন বলছেন, ‘দিনদশেক ধরেই এই পরিস্থিতি। এত ধোঁয়ার মধ্যে বসে থাকতে হচ্ছে। পেটের ভাত তো জোগাতে হবে।’ চারমাথার মোড়ে ডিউটি করছিলেন একজন ট্রাফিক পুলিশ ও একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। ক্রমাগত ধোঁয়ায় তাঁদেরও যেন প্রাণ যায় যায় অবস্থা। বারবার রুমালে নাক-মুখ ঢাকার চেষ্টা করছিলেন তাঁরাও। কিন্তু বৃথা সে চেষ্টা।
গুগলের একটি অ্যাপের দেওয়া তথ্য অনুসারে, এদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট নাগাদ ডাম্পিং গ্রাউন্ড সংলগ্ন এলাকার দূষণের মাত্রা ছিল ২৫৭, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে, গোটা শহর ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ধোঁয়ায় যে ভরে যাচ্ছে, তা মানতে চাননি জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ মানিক দে। তাঁর যুক্তি, ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডের ধোঁয়ায় কখনও চোখ জ্বালা করবে না। একমাত্র পাতা পোড়া ধোঁয়া হলেই চোখ জ্বালা করবে। সেই কারণে যে ধোঁয়ায় গোটা শহর ঢেকেছে তা বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে আগুন লাগার ফলেই হয়েছে।’
মেয়র পারিষদের কথা শুনে রাস্তার উলটো পাশে থাকা বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে গিয়ে দেখা গেলে, অধিকাংশ জায়গায় আগাছা ও ছোট গাছে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, খোলাচাঁদ ফাঁপড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সেখান থেকে বের হওয়া ধোঁয়াই কি তাহলে ছড়িয়ে পড়ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে? বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের সারুগাড়ার রেঞ্জ অফিসার স্বপনকুমার রাউতের বক্তব্য, ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে রোজ আগুন জ্বলতে থাকে ও ধোঁয়া বের হয়। সেই ধোঁয়া দিয়ে ঢেকে যায় গোটা শহর। জঙ্গলে যে আগুন জ্বলে সেখান থেকেও অল্প কিছু ধোঁয়া বের হয়।’
এদিন দুধিয়া, মিরিক, কার্সিয়াং সহ আরও বেশ কিছু জায়গা থেকে বনাঞ্চলে আগুন লাগার খবর মিলেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এতগুলো জায়গায় একইসঙ্গে আগুন জ্বলছে? তবে কি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে? বনকর্তার সাফাই, জঙ্গল লাগোয়া বস্তি এলাকার অনেকে আগুন জ্বালায়। আবার এমনিতেও ঝরাপাতা থেকে আগুন জ্বলছে।
আবার মানিক বলছেন, ‘প্রতিবারই মিথেন গ্যাস থেকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আগুন ধরে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে আমরা দুটি দমকলের ইঞ্জিন নিয়ে এসে আগুন নিভিয়েছি।’
আশ্চর্যজনক বিষয় হল, ২০১৮ সালের আগে এই সমস্যা সেভাবে দেখা যায়নি কোথাও। কিন্তু ওই বছর থেকে প্রতিবার দোলের আগে ও পরে জঙ্গল ও ডাম্পিং গ্রাউন্ডে একইসঙ্গে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। এর কারণ কী, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউই। কিন্তু যেভাবে বিষাক্ত ধোঁয়ায় প্রবীণ ও শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছে, তাতে আপাতত ভ্রূক্ষেপ নেই কারও। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সর্বত্রই ধোঁয়া রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি উঠলেও খোদ মহানাগরিক গৌতম দেবও এনিয়ে চুপ।