নাগরাকাটা: বাগান খোলার বিষয়টি এখনও বিশবাঁও জলে। এদিকে নতুন মরশুমও দোড়গোড়ায়। শুধু আগাছায় ছেয়ে যাওয়াই নয়। শীতকালীন পরিচর্যা বলতে যা বোঝায় সেসবের কিছুই এবার হয়নি। গাছের যত্নআত্তির কাজটি না হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে যদি বাগান খোলেও তবে এবারের মতো কাঁচা পাতা মেলার সম্ভাবনা আর থাকবে না। এমন পরিস্থিতিতে বাগান বাঁচাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এগিয়ে এসেছেন নাগরাকাটার (Nagrakata) বামনডাঙ্গার (Bamandanga) শ্রমিকরা। নিয়ম করে প্রতিদিন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তাঁরা। এজন্য তৈরি করেছেন একটি রুটিনও। একেকটি শ্রমিক মহল্লা তাঁদের অংশে কাজ করছেন। কোথাও ৫০ জন, আবার কোথাও এরও বেশি শ্রমিক (Tea Worker) কাজ করছেন। চা গাছ ছাটাই বা প্রুনিং থেকে শুরু করে নিকাশিনালার সংস্কার সবকিছুই করছেন বিনা মজুরিতে। সেখানকার হাতি লাইন, বিছ লাইন. ডায়না লাইনের মতো শ্রমিক মহল্লাগুলিতে গেলে শ্রমিকদের কাজ করার দৃশ্য দেখলে মনে হতে পারে বাগান বোধ হয় খুলে গিয়েছে। প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা ধরে শ্রমিকরা কাজ করে তবেই বাড়ি যাচ্ছেন।
শ্রমিকরা জানান, মার্চের গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যাবে চায়ের নতুন মরশুম। এখনই যদি শীতের পরিচর্যার কাজটি না করা হয় তবে তো কাঁচা পাতাই মিলবে না। এমন পরিস্থিতি দেখলে যদি নতুন মালিক আসেও তবে প্রথমেই বেঁকে বসতে পারে। তা হতে দিতে চাই না। বাগান বাঁচলে তবেই শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার বাঁচবে।
গত ৩ অক্টোবর রাতে বামনডাঙ্গায় লকআউটের নোটিশ জারি করে সেখানকার পরিচালকরা বেপাত্তা হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন ১ হাজার ১৭৪ জন শ্রমিক। সেসময় শ্রম দপ্তরের তরফে আলাদা করে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে দুটি বৈঠক হয়। জট খোলার জন্য জলপাইগুড়িতে ডেপুটি লেবার কমিশনারের দপ্তরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও ডাকা হয়। মালিকদের কেউ হাজির হননি। পরে জেলা প্রশাসনের তরফেও মালিকদের প্রতিনিধিকে তলব করা হয়। ১৬ অক্টোবর একই মালিকানাধীন দুই বাগানের পরিচালকরা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় আর্থিক সংকটের কারণে আপাতত বাগান চালানো যাচ্ছে না। তবে তাঁরা না ফেরা পর্যন্ত যদি শ্রমিকরা কাঁচা পাতা তুলে বিক্রি করেন তাতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। এরপর ১৭ নভেম্বর এক নয়া মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগান খোলা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। সেই অনুযায়ী ২২ নভেম্বর থেকে স্বাভাবিক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এদিকে যতদিন যাচ্ছে ততই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে।