শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: চূড়ান্ত সময়সীমা পার হয়ে গেলেও দাবি মেনে পদক্ষেপ করেনি কর্তৃপক্ষ। বুধবার থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (NBU) গোটা ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করল সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি। আন্দোলনের জেরে সপ্তাহখানেক ধরে কার্যত বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন (Administrative building)। গোটা ক্যাম্পাস বন্ধ হলে প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাবে পঠনপাঠন, গবেষণা, বিভাগীয় কর্মশালা সহ যাবতীয় কাজ। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাজ্যপাল এবং ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কুশপুতুল দাহ করে শিক্ষাবন্ধু সমিতি। তারপরই ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা করা হয়।
আন্দোলনকারীরা এদিন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ (Protest) মিছিল করেন। শিক্ষাবন্ধু সমিতির আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন অস্থায়ী শিক্ষকরাও। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বা রেজিস্ট্রার কেউই এদিন ক্যাম্পাসে ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে কেন তাঁরা ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ক্যাম্পাস ইনচার্জ প্রণব ঘোষের কথা, ‘আমি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে ক্যাম্পাস সচল থাকে তার অনুরোধও করেছি। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পঠনপাঠন বন্ধ হলে বড় ক্ষতি হবে।’ অচলাবস্থার ফলে পঠনপাঠন যে ব্যাহত হতে পারে সেই আশঙ্কা আগেই করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স কাউন্সিল। সংগঠনের সভাপতি রঞ্জন রায়ের বক্তব্য, ‘এভাবে দিনে পর দিন একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। পরিস্থিতি সুস্থ ও স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপ করুক কর্তৃপক্ষ।’
অস্থায়ী কর্মী ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল এবং আন্দোলনকারী দুই নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের নির্দেশের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুটি নির্দেশের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে আধিকারিক প্রত্যেকেই। নির্দেশ প্রত্যাহারের জন্য সোমবার পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সিএম রবীন্দ্রনকে সময় দিয়েছিলেন সবপক্ষের প্রতিনিধিরা। তবে নির্দেশ তো প্রত্যাহার হয়নি, উলটে সবপক্ষের প্রতিনিধিদের বৈঠকের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রবীন্দ্রন। তাতেই আরও ক্ষুব্ধ হয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষাবন্ধু সমিতির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক রণজিৎ রায়ের কথা, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বা রেজিস্ট্রার দুর্বলতা ভাবছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষ একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেও সেটাও তাঁরা মানতে চাইছেন না। বিজেপির পার্টি অফিস থেকে যেমন নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সেভাবেই কাজ করছেন। তাই বুধবার নিরাপত্তা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরির দায়ভার সম্পূর্ণ রাজ্যপাল, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং আরএসএস-এর মদতপুষ্ট কয়েকজন শিক্ষককেই নিতে হবে।’ নিরাপত্তা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দপ্তর, বিভাগের চাবি থাকে। সেই দপ্তর বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই খুলবে না কোনওকিছুই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার জন্য ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও উপাচার্যকেই দায়ী করেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতারা। সংগঠনের সম্পাদক লালন চৌধুরীর বক্তব্য, ‘ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য পালিয়ে গিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ভয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছেন না। হোয়াটসঅ্যাপের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে। কেউ কোনও দায়িত্ব নিতে রাজি নন। দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে রসাতলে পাঠাচ্ছেন।