মাদারিহাট: ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে জলদাপাড়া উদ্যানে এক ইঞ্চি জমিতেও নতুন ঘাস লাগানো হয়নি। আর ২০২৩ সালে লাগানো ঘাস বেড়ে উঠতে আরও দু’বছর সময় লাগবে। তাই ওই ঘাস বাঁচাতে বর্তমানে তারের মজবুত বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যাতে বন্যপ্রাণীরা সেই নতুন ঘাস খেতে না পারে। তার ওপর দীর্ঘ খরা এখন গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে উঠেছে।
বৃষ্টির দেখা নেই বহুদিন হল। পানীয় জলের সমস্যা তো আছেই, তার ওপর দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকটও। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ঘাস শুকিয়ে মরে লাল হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে ঘাসের পরিবর্তে কলা গাছ খেতে হচ্ছে জলদাপাড়ার প্রায় ৮৫টি কুনকি হাতিকে। কম পুষ্টিকর খাবার খেয়ে অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে কুনকিদের মধ্যে। এছাড়া বন্যপ্রাণীদের ভরসা তোর্ষা নদীর চরের ঘাস। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেকটাই কম। এতে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ার সম্ভাবনার আশঙ্কাও করছেন বনকর্মীদের একাংশ।
তাই শুধু খরার জন্য পরিস্থিতি এরকম সেটা মানতে নারাজ বনকর্মীদের একাংশ। তাঁরা জানিয়েছেন, গত তিন বছর জলদাপাড়ার এক ইঞ্চি জমিতেও নতুন ঘাস লাগানো হয়নি। মরা ঘাস আগুনে না পোড়ানোয় সেখান থেকে নতুন ঘাস গজাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খাদ্যের তাগিদে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে দলে দলে চলে আসতে পারে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভির কথায়, ‘প্রকৃতির সঙ্গে কারও কিছুই করার নেই। প্রতিবছর এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বন্যপ্রাণীদের। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই তাদের জীবন বাঁচে। তবে নতুন ঘাস লাগানো হয়েছে।’
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ৪০ শতাংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে তৃণভূমি। এর উপর প্রায় ৩০০ গন্ডার, প্রায় ৮ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, কয়েক হাজার বাইসন, শতাধিক বুনো হাতি এবং ৮৫টি কুনকি হাতি খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল। এছাড়া বনবস্তির গবাদিপশুর খাবারও ওই জঙ্গল থেকেই সংগ্রহ করা হয়।
সূত্রের খবর, অর্থ অনুমোদন না হওয়ায় তিন বছর জলদাপাড়ায় নতুন প্ল্যান্টেশন করা যায়নি। ফলে ঘাস লাগানো থেকে শুরু করে জঙ্গলের কোনও পরিচর্যাই হয়নি। খরায় হাতির প্রিয় খাবার ঢাড্ডা, পুরুন্ডি, মালসা, চেপ্টি, নলঘাস সব শুকিয়ে মরে গিয়েছে। জলাশয়গুলির বেশিরভাগ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।
জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রামেজ রজার বলেন, ‘প্রতিবছর শীতকালে এরকমই হয়। তবে জলাশয়ে পর্যাপ্ত জল আছে। নতুন যে ঘাস লাগানো হয়েছে তা বড় হতে সময় লাগবে। তাই বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।’