আসানসোলঃ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে রাজভবন ও রাজ্য সরকারের সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। এই সংঘাতের আবহেই শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসাবে যোগ দিলেন দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায়। এদিন তিনি তার দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন। যদিও জানা গেছে, তার এই দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন।
প্রসঙ্গতঃ, গত ২৮ মে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে ডঃ সাধন চক্রবর্তীর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার পর ১ জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ খালি ছিল। তবে ডঃ সাধন চক্রবর্তীর উপাচার্য হিসেবে শেষ তিন মাস খুব একটা ভালো কাটেনি। প্রথমে তার সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষা কর্মী ও পড়ুয়াদের একাংশের সঙ্গে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করে তারা গত ১৪ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্ণা বিক্ষোভে বসে পড়েন। বলতে গেলে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়। যা নিয়ে উপাচার্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে প্রায় দেড় মাস পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের চেম্বারে ঢুকতে পারেন উপাচার্য। কিন্তু আচমকাই মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস উপাচার্যকে বরখাস্ত করেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উপাচার্য কলকাতা হাইকোর্টের যান। এক সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যপালের তরফে তার আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে বলেন, আচার্য তার নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাল্টা উপাচার্য হাইকোর্টে বলেন, নির্দেশ প্রত্যাহার করা হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তারপরে রাজ্যপালের প্রত্যাহারের চিঠি নিয়ে উপাচার্য আপত্তি করেন। তা নিয়ে বিস্তর চিঠি চালাচালি হয়। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য আর পদত্যাগ করেননি।
দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় এতদিন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করার পরে হায়দ্রাবাদের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ইংলিশ এন্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজে পিজিসিটিই করেন। তিনি ডক্টরেট করেন হায়দ্রাবাদের ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস ইউনিভার্সিটি থেকে। করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্রেট ইউনিভার্সিটির ডক্টরেট ফেলো। এছাড়া অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্ট অ্যান্টোনিস কলেজের চার্লস ওয়ালেস পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। এর পাশাপাশি গ্রিস ইউনিভার্সিটির ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন তিনি।
উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার পরে তিনি বলেন, আচার্য আমাকে নিয়োগ পত্র দিয়েছেন। সরকার আমাকে লিখিত ভাবে এখনও পর্যন্ত কিছু বলেনি। তাই যোগদান করলাম। এরপর যদি রাজ্য সরকার কিছু নির্দেশ দেয়, তখন দেখব। কিন্তু আচার্য্যের নির্দেশ তো মানতে হবে।
বিদায়ী উপাচার্যকে কেন্দ্র করে যে অচলাবস্থা চলছিল সে বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই বিষয়ে বিশদ জানি না। আস্তে আস্তে এই ব্যাপারে জানার চেষ্টা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। গণতান্ত্রিক উপায়ে সবার মতামত নিয়ে কাজ করার পক্ষপাতি। এ বিষয়ে যদি কোন অভিযোগ থেকে থাকে আমাকে যতটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমি সেই অভিযোগ সমাধানের চেষ্টা করব।
তিনি আরও বলেন, কি ধরনের অনিয়মের অভিযোগ হয়েছে সেগুলো আমাকে জেনে নিতে হবে। আমার এক্তিয়ারের মধ্যে তদন্ত করব কি করব না বা তদন্ত কতটুকু করতে হবে সে বিষয়গুলি বুঝতে হবে। কারণ আমি পূর্ণ সময়ের ভাইস চ্যান্সেলর নই। আমি অন্তর্বর্তীকালীন ভাইস চ্যান্সেলর। আমাকে চ্যান্সেলর একটা বিশেষ জায়গায় বেঁধে দিয়েছেন। সুতরাং আমি যতদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে রয়েছি ততদিন পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যাতে ক্ষুন্ন না হয়, কোন রকমের প্রতিবন্ধকতা যাতে না তৈরি হয় তার জন্য যেটুকু করার আমি তা করব। সবার আগে আমার যেটা অগ্রাধিকার থাকবে সেটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পঠনপাঠন এবং ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, নন টিচিং স্টাফ, শিক্ষাকর্মী সবার মতামত। আমি একজন অধ্যাপক। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের যেখানে অসুবিধা হবে সে ব্যাপারটি আমি বরদাস্ত করব না। এরই সঙ্গে তিনি বলেন, যদি দেখি আমি পারছি না সে ক্ষেত্রে আমি সঙ্গে সঙ্গে ইস্তফা দেব। যাতে আমার চেয়ে ভালো কেউ আসতে পারেন। এদিকে শিক্ষা মহল মনে করছে, প্রফেসর দেবাশীষ বন্দোপাধ্যায়ের যোগদানে আসানসোলে কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা এবার কাটবে।