উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ‘ইন্ডিয়া’ জোটে বামেরা শামিল হওয়ায় বাংলায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সিপিএমের। গণতন্ত্র ধ্বংস করার দায়ে যাদের প্রতিনিয়ত কাঠগড়ায় তুলছে সিপিএম, জাতীয় স্তরে তাদেরই পাশে বসে একজোটে বিজেপির বিরোধিতা মেনে নেয়নি দলেরই একাংশ। বাংলায় দলের জন্য ‘অস্বস্তিকর পরিস্থিতি’র কথা কার্যত স্বীকার করে নিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। সেই সঙ্গেই স্পষ্ট করে দেওয়া হল, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসবে না সিপিএম। বঙ্গে বামেদের কর্মসূচিও চলবে নিজেদের মতো।
রবিবার দিল্লিতে শেষ হয়ে গেল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠক। বৈঠকের শেষ দিনে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তার জবাবি ভাষণে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষেই সওয়াল করেন। তার ব্যাখ্যা, বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করা, দেশের সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে রক্ষা করতে বিজেপি-বিরোধী বিভিন্ন দল এক জায়গায় এসেছে। সেই লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ। জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্ব থাকলেও রাজ্যভিত্তিক ‘বাস্তব পরিস্থিতি’র নিরিখেই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তৃণমূলকে নিয়ে বাংলার নেতাদের ‘উদ্বেগ’ সঙ্গত। জাতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলা ও কেরলের পরিস্থিতি মেলানো মুশকিল।
এদিন ইয়েচুরি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘রাজ্যের পরিস্থিতির নিরিখে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের কোনও আলোচনা বা যৌথ কর্মসূচিও হবে না। সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের সমস্যার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কিছু কর্মসূচির সিদ্ধান্তও হয়েছে এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি আগেই কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গণ-সংগঠনের ওই প্রতিবাদে সিপিএমের নেতা-কর্মীরাও শামিল হবেন’।
রাজ্যে পঞ্চায়েত হিংসায় তৃণমূলের হাতে বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেসের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ বাড়তি হাতিয়ার হয়েছে বিজেপির। রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘাত চালিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা কী ভাবে পটনা বা বেঙ্গালুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসছেন, এই প্রশ্ন তুলে প্রচারে নেমে গিয়েছে বিজেপি। সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের রাজনৈতিক লাইনে কোনও পরিবর্তন হয়নি, হচ্ছে না। বাংলা বা কেরলের রাজনৈতিক পথ নিয়ে সম্মেলনে যা ঠিক হয়েছে, তা বহাল থাকছে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূল, এই দু’দলের মধ্যে কোনও একটাকে সঙ্গে নিয়ে অন্যটার মোকাবিলা করা যায় না। ওই দুই দলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে এককাট্টা করার লক্ষ্যে বাংলায় দল কাজ করে যাবে। কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতাও হবে না।’’ এর অর্থ দিল্লি এবং রাজ্যে দু’রকম লাইন বহাল থাকবে!