শিলিগুড়ি: সাত বছর ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আত্মীয়পরিজনহীন হয়ে কাটানো বৃদ্ধাকে স্থানান্তরিত করা হল বৃহন্নলা পরিচালিত হোমে। শিলিগুড়ির শক্তিগড় ৩ নম্বর রাস্তার বাসিন্দা বহ্নিশিখা ঘটক ২০১৭ সাল থেকে মেডিকেলে থাকলেও তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য যোগাযোগ করতে আসেননি।
এই পরিস্থিতিতে মেডিকেলের মহিলা ওয়ার্ডের একটি শয্যা ওই বৃদ্ধার দীর্ঘ সাতবছরের ঠিকানা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাটের উত্তর ছেকামারিতে বৃহন্নলা পরিচালিত হোমে ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বছর পাঁচেক আগে জনাদশেক বৃহন্নলা মিলিতভাবে ‘সুমতি মায়ের সেবাশ্রম’ নামে ওই হোম চালু করেন। বছর দুয়েক আগে দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড ফোরামের সঙ্গে হোমটি যুক্ত হয়। হোমের কর্মকর্তা মধুসূদন সরকার বলেন, ‘বৃহন্নলারা মিলে যা টাকা উপার্জন করি তা দিয়েই হোমটি পরিচালনা করি। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলেছি। বর্তমানে চারজন ভবঘুরে হোমে রয়েছেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় দেখভাল আমরাই করি। বহ্নিশিখা ঘটকের সমস্তটা আমরা দেখব।’
মেডিকেল সূত্রে খবর, বহ্নিশিখা নিজের বাড়িতে দরজা, জানলা বন্ধ করে দীর্ঘদিন কাটাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে পাড়ার তরুণরা তাঁকে মেডিকেলে ভর্তি করেন। বৃদ্ধা সুস্থ হয়ে গেলেও পরিবারের কোনও সদস্য তাঁর খোঁজ নিতে আসেননি। এমন পরিস্থিতিতে মেডিকেলের শয্যাটিকে বৃদ্ধা নিজের ঘর বানিয়ে ফেলেন।
মেডিকেলের ভবঘুরেদের হোমে স্থানান্তরিত করার বিষয়ে আগেই দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড ফোরামের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়েছিল। সেইমতো গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ওই বৃদ্ধাকে হোমে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এদিন নির্দিষ্ট আইন ও চুক্তির মাধ্যমে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ওই বৃদ্ধাকে হস্তান্তরিত করেন।
এদিন হুইলচেয়ারে বসিয়ে বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে দার্জিলিং ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড ফোরামের সভাপতি অমিত সরকার বলেন, ‘বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করলেও তাঁরা কেউ আসেননি। মহিলাকে আপাতত বৃহন্নলাদের হোমে রাখা হবে। পরবর্তীতে তিনি যদি অন্য কোনও হোমে থাকতে চান সেটি দেখা হবে।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে ৩৭ জন ভবঘুরে তাঁদের বিভিন্ন হোমে রয়েছেন। এছাড়া আগে তিনজনকে বাড়িতে পাঠাতেও সমর্থ হয়েছেন বলে জানান তিনি।