নয়াদিল্লি: জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি পর্বে পরবর্তী জি২০’র সভাপতিত্বের দায়িত্ব স্বরূপ সাম্মানিক ব্যাটন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজি ইনাসিও লুলা ডি সিলভার হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই প্রথা কায়েম রেখেই শনিবার জি২০ স্পিকার্স সম্মেলনের (পি-২০) সমাপ্তিতে পরবর্তী পি২০’র দায়ভার ব্রাজিলিয়ান স্পিকার আর্থার সিজার পেরেইরা ডি লিরার হাতে অর্পণ করলেন লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লা।
শনিবার দিল্লির যশভূমি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে শেষ হল দু’দিনের পি২০ অধিবেশন। শুক্রবার এই শীর্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জি২০ সামিটে গৃহীত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার ও এক ভবিষ্যৎ’র লক্ষ্যে কাজ করার উদ্দেশ্যে, গত দুদিন ধরে সাস্টেনেবল এনার্জি ট্রানজিশন (এসএটি) সহ স্থায়ী উন্নয়নশীলতার লক্ষ্যনির্ধারণ (এসডিজি), নারীবাদী এবং কর্তৃক বিকাশ তথা অত্যাধুনিক বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সাধারণের জীবনযাত্রার ক্রমবিকাশ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণে বসেন বিভিন্ন দেশের ২৬ জন অধ্যক্ষ, ১০ জন ডেপুটি অধ্যক্ষ সহ ৫০ জন সাংসদ, ১৪ জন জিএস বা জেনারেল সেক্রেটারি সহ প্রায় ৩৫০-র বেশি প্রতিনিধিরা। ‘বসুধৈব কুটুম্বকমে’র দর্শনে প্রাণিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অধিবেশনের সূচনায় এই সামিটকে ‘মহাকুম্ভে’র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ভারত বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম, যার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের স্বাধীনতার পর গত ৭৫ বছরের যাত্রায় গণতন্ত্র, বৈচিত্র্য এবং জনসংখ্যা শক্তির মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে। সংসদে বিস্তারিত আলোচনার পর বিভিন্ন বিষয়ে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শনিবার অধিবেশনের সমাপ্তিপর্বে লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লার দাবি, পি২০ সম্মেলনে বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে ভারতের সংসদ। বিশ্ব মানবতার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহমত গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়ায় এই পি-২০ কনক্লেভ আয়োজনের গুরুত্বও বাড়ছে। এই শীর্ষ সম্মেলনে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, মহিলা-চালিত উন্নয়ন এবং মানবতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। সেইসঙ্গে ‘মিশন লাইফ’-এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে এই অধিবেশনে। বিড়লার দাবি, মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের বিষয়টি অধিবেশনে বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে। ২০৩০-এর দিকে এগিয়ে চলার পথে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের সঙ্গে এমন অনেক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে, যেগুলির প্রভাব সর্বজনীন। এগুলি নিয়ে আলোচনা এবং যাবতীয় মত পার্থক্যকে দূরে সরিয়ে সহমতে পৌঁছানো প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে নীতিগত সহমত গড়ে তোলাও দরকার, যা ভারতের সভাপতিত্বে পি২০ অধিবেশনের মাধ্যমে অনেক দূর সাধিত হয়েছে।
ওম বিড়লা জানিয়েছেন, মহিলা ক্ষমতায়নের পথে নয়া অধ্যায় গড়েছে ভারত। ভারতীয় সংসদ ঐক্যমত্য ভাবে পাস করিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মহিলা সংরক্ষণ বিল। বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিই হোক, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ বিজ্ঞান কিংবা ক্রীড়াক্ষেত্রই হোক, সমস্ত ক্ষেত্রে মহিলারা তাঁদের শক্তি ও সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। ভোটাধিকার সহ সবক্ষেত্রে সমানাধিকার দিয়ে আমাদের সংসদ মহিলাদের ক্ষমতায়ন করেছে। গোড়ার দিকে পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলির নির্বাচনে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপর তা লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচনেও কার্যকর করা হয়। এই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন মিলেছে। ভারতের এই অবস্থানকে নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়েছে পি২০ সামিটে অংশগ্রহণকারী সমস্ত দেশ। এই প্রসঙ্গে সম্মেলনের গৃহীত জয়েন্ট স্টেটমেন্ট থেকে উদ্ধৃত করে বিড়লা বলেন, ‘সমস্ত অতিথি রাষ্ট্রগুলি একত্রে নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মসূচি মান্যতায় সম্মতিজ্ঞাপন করেছে, আগামী দিনে এই সংসদীয় সংস্কৃতি বিশ্বজনীন হয়ে উঠবে, এমনটাই আশা রাখি আমরা।’
পি-২০ অধিবেশনে এদিন অংশ নেন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যসভা চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনকড়। পি-২০র অতিথি অভ্যাগতদের সম্মানে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন তিনি। অতিথি রাষ্ট্রের সংসদীয় অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ডেপুটি চেয়ার হরিবংশ সিং যাদবও। গতকাল অতিথিদের নতুন এবং পুরোনো সংসদ ভবন পরিদর্শন করিয়ে দেখানো হয়। মহিলা অতিথিদের প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা এবং জাতীয় কুটির ও হস্তশিল্প মিউজিয়াম পরিদর্শন করানো হয়৷ শনিবার সকালে রাজঘাটে গিয়ে গান্ধি সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন অতিথিরা। পরে যশভূমিতে দিল্লি পি২০ অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সভাপতিত্বের ভার তুলে দেওয়া হয় ব্রাজিলের হাতে। আগামী বছর ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে বসবে দশম পি২০ অধিবেশন।