শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: দেশের বড় বড় মন্দিরে অনলাইন মাধ্যমে পুজো দেওয়া একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১০ বছর আগে কোচবিহারেও (Coochbehar) সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অথচ দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচারের অভাবে মদনমোহনবাড়িতে (Madanmohan Temple) বন্ধ হয়ে রয়েছে একসময় চালু হওয়া অনলাইন মাধ্যমের পুজো (Online Puja)। ফলে ইচ্ছে থাকলেও দূরদূরান্তে থাকা ভক্তরা বঞ্চিত হচ্ছেন পুজো থেকে।
বহু নামী মন্দিরে অনলাইনে পুজো দেওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম, গোত্র, ঠিকানা সহ আনুষঙ্গিক তথ্য লিখতে হয়। ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই দক্ষিণা দেওয়া যায়। নিজের নামে পুজো শেষে নির্ধারিত ঠিকানায় প্রসাদ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরকমই উদ্যোগ নিয়ে ২০১৪ সালে মদনমোহনবাড়িতে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বর্তমানে বন্ধ সেই ব্যবস্থা।
এবিষয়ে ট্রাস্টের সচিব কৃষ্ণগোপাল ধাড়া বলেছেন, ‘আমি দুই মাস হল দায়িত্ব নিয়েছি। কী কারণে সেটি বন্ধ হয়ে রয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
কোচবিহারের কুলদেবতা বলা হয় মদনমোহনকে। কোচবিহার তো বটেই দেশ-বিদেশে মদনমোহনের ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছেন। বাংলা সিনেমাতেও মদনমোহনের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এই মদনমোহনকে কেন্দ্র করেই উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহৎ রাসমেলা হয়ে থাকে। সেই সময় লক্ষ-লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড় হয়। এছাড়া, সারাবছরই মদনমোহনবাড়িতে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে দূরদূরান্তের ভক্তদের বিশেষত, যাঁরা জেলা বা রাজ্যের বাইরে থাকেন তাঁদের পক্ষে সবসময় মন্দিরে এসে পুজো দেওয়া সম্ভব হয় না। তাঁদের কথা ভেবেই ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মদনমোহনবাড়িতে অনুষ্ঠানিকভাবে ওয়েবসাইট চালু করা হয়। তার ফলক এখনও দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের কার্যালয়ে রয়েছে।
গবেষণার জন্য কোচবিহারের বাসিন্দা সাগ্নিক চক্রবর্তী দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতায় থাকেন। সবসময় কোচবিহারে আসার সুযোগও মেলে না। তাঁর কথায়, ‘মদনমোহন আমাদের কাছে আবেগ। যখন কোচবিহারে থাকতাম তখন বছরে অন্তত একবার নিজের জন্মদিনে সেখানে গিয়ে পুজো দিতাম। কিন্তু এখন বাইরে থাকায় সেই সুযোগটা আর পাই না। যদি অনলাইন মাধ্যমে পুজো চালু থাকত তাহলে ভালো হত।’
সাগ্নিকের সংযোজন, ‘তারাপীঠ সহ নানা মন্দিরে অনলাইন পুজো চালু রয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট মন্দিরগুলি আর্থিকভাবেও লাভবান হয়। সেখানে হলে কোচবিহারে কেন হবে না?’
কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি তথা আইনজীবী রাজু রায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এখন সবকিছুই আধুনিক হচ্ছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন। যেহেতু পুজো বিশ্বাস ও আস্থার উপর নির্ভর করে, তাই যে ভক্তরা বাইরে থাকেন তাঁরা যাতে অনলাইনের মাধ্যমে পুজো দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমে দক্ষিণা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় প্রসাদ পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।’
২০১৪ সালে ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন পূর্ত দপ্তরের পরিষদীয় সচিব তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
তাঁকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘করোনাকালের পর থেকে সবাই এখানে এসেই পুজো দিচ্ছেন। তবে অনলাইন মাধ্যমের পুজোটি বন্ধ অবস্থায় কেন রয়েছে তা খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’