খড়িবাড়িঃ ইন্দো-নেপাল সীমান্ত লাগোগা সতীশ চন্দ্র চা বাগানে সরকারিভাবে শুরু হল জমি জরিপের কাজ। শিলিগুড়ি মহকুমার পানিট্যাঙ্কির এই চা বাগানে গড়ে ওঠা মার্কেটের জমি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। শুক্রবার সরকারিভাবে গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের মাধ্যমে জরিপ করা হয় সেই বিতর্কিত জমির। জমি জরিপের সময় উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কিশোরীমোহন সিংহ, পরিষদের বিরোধী দলনেতা অজয় ওঁরাও, খড়িবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রত্না রায় সিংহ, রানীগঞ্জ পানিশালী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সান্তনা সিংহ, মেচি মাকেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে নেপাল সীমান্ত লাগোয়া পানিট্যাঙ্কির সতীশ চন্দ্র চা বাগানের জমি দখল করে একটি সিন্ডিকেট গঠিত হয়। এই সিন্ডিকেটের মাথারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। চাবাগান কর্তৃপক্ষের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ করেই শুরু হয় জমি বিক্রির কারবার। দখল করা চা বাগানের জমিতে প্লট করে বিক্রি করে সিন্ডিকেটের কর্তারা। নেতারা জমি বিক্রি করে কামিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। সে সময় উত্তরবঙ্গ সংবাদের পানিট্যাঙ্কি জমি কেলেঙ্কারির খবরটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরপর ওই দখল করা জমির জন্য সরকারি লিজের আবেদন করে সিন্ডিকেটের নেতারা। পরবর্তীকালে বিতর্কিত চা বাগানের ৭.৯২ একর (প্রায় ২৪বিঘা) জমি মেচি মাকেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নামে ৯কোটি ৭৬লক্ষ ৬০হাজার ৮০০ টাকার বিনিময়ে ৩০ বছরের জন্য লিজ দেয় রাজ্য সরকার। ২০২০ সালের ১২ মার্চ নবান্নের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে লিজ মঞ্জুর করা হয়। এবং খড়িবাড়ি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর এই জমি মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে হস্তান্তর করে।
কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে ২৪ বিঘা নয়, প্রায় ৩৩বিঘা জমি দখল করে কোটি কোটি টাকার বিক্রি করেছে চক্রটি। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নব নির্বাচিত বোর্ড চাবাগানের বিতর্কিত জমিটি জরিপের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ দুপুরে খড়িবাড়ি ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের তত্ত্বাবধানে জমিটি মাপজোক করা হয় গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের মাধ্যমে।
এই প্রসঙ্গে মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ঘনশ্যাম করুয়ার দাবি লিজ প্রাপ্ত জমির বাইরে অতিরিক্ত কোনও জমি দখল করা হয় নি। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কিশোরীমোহন সিংহ জানান, স্থানীয় সাধারণ মানুষের অভিযোগের পাশাপাশি শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সন্দেহ লিজভুক্ত ৭.৯২ একর জমির চেয়ে অনেক বেশি জমি দখল হয়েছে। তাই মহকুমা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জমিটি মাপজোক করে দেখা হচ্ছে। লিজের বেশি জমি থাকলে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা অজয় ওঁরাও বলেন, সঠিকভাবে মাপজোকের পর পদক্ষেপ করা হবে।