অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি: গরুমারা জঙ্গল ঘেঁষা ময়নাগুড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত বনবস্তিতে রয়েছে নির্বাচনি বুথ। জঙ্গলের সুদীর্ঘ পথ পেরিয়ে ওঁরা আসবেন ভোট দিতে। ময়নাগুড়ির ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা গরুমারা জঙ্গল ঘেঁষা কালামাটি বনবস্তি। যেখানে দিনদুপুরে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে হাতি কিংবা বাইসন। এক জঙ্গল থেকে আরেক জঙ্গলে লাফিয়ে, দৌড়ে রাস্তা পার করে চিতাবাঘ। এই ছবি নিত্যদিনের।
সেই ময়নাগুড়ি ব্লকের শেষ সীমানায় বনবস্তিতে রয়েছে জঙ্গল ঘেরা (১৬/১৯) ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। প্রতিবার ভোটে এখানেই ভোট দিতে আসেন পাঁচ শতাধিক বনবস্তিবাসী। স্বাভাবিকভাবে ভোটারের সংখ্যা অনেকটাই কম। তাই গত লোকসভা কিংবা বিধানসভার মতো ভোটগুলোতে প্রার্থী কিংবা কর্মী কাউকেই সেভাবে পাড়ি দিতে দেখা যায়নি প্রত্যন্ত এলাকায়। তবে গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে এই বনবস্তি থেকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। দুই দলের প্রার্থীই মনোনীত হয়েছিলেন এই বনবস্তি থেকেই। বিজেপি প্রার্থী গতবার জয়ী হন।
কিন্তু একাধিক সমস্যায় জর্জরিত এই বনবস্তিবাসী। অন্ধকার ঘোচাতে দিনকয়েক আগে যদিও কিছু সোলার আলো বসেছে। তবে পানীয় জলের সমস্যা আজও ঘোচেনি এই বনবস্তিতে। সন্ধে হলেই অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা এলাকা। সারাবছর স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ছাড়া আর কাউকেই তাঁরা দেখেন না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এলাকাবাসী বাবলু ওরাওঁয়ের কথায়, ‘দীর্ঘ বছর ধরে আমরা ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু শুধুমাত্র পঞ্চায়েত ভোট ছাড়া আর কোনও ভোটের প্রার্থীদের আমরা দেখিনি এই এলাকায়।’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বাভাবিকভাবে একের পর এক ভোট পেরিয়ে গেলেও জনপ্রতিনিধিদের কাছে তাদের দাবি, আবদার তুলে ধরার সুযোগ খুব একটা পাননি বনবস্তিবাসী। তাই আসন্ন লোকসভা ভোট নিজেদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের।
স্থানীয় তরুণ রবিন ওরাওঁ বলেন, ‘ভোটের সময় প্রতি বছর ভোট দিতে বাড়িতে আসি ঠিকই, শুধুমাত্র পঞ্চায়েত প্রার্থী ছাড়া কিন্তু গত লোকসভা, বিধানসভা ভোটে কাউকেই সাক্ষাৎ দেখবার ভাগ্য হয়নি।’ রবিনের মতো আরও অনেকেই কর্মসূত্রে বাইরে রয়েছেন পেশার তাগিদে। তবুও ভোটের ঠিক আগে সকলেই বাড়ি ফিরে আসেন। কালামাটির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী বুধুরাম, চাটুয়া এবং কালীপুর বনবস্তি সহ মোট চারটি বনবস্তি এই পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত। সকলের একটাই দাবি, বনবস্তির উন্নয়ন।
স্থানীয় বুধুরামের প্রবীণ বাসিন্দা কর্মা ওরাওঁ বলেন, ‘সারাবছর বন্যপ্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থানে কাটিয়ে দিই। বন্যপ্রাণীর আগমন তো প্রতিদিনের ঘটনা, বনবস্তির উন্নত রাস্তাঘাট, পানীয় জল, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হোক এটাই দাবি আমাদের।’