নাগরাকাটা: কারি লাইন নামে একটি শ্রমিক মহল্লার মালতি অসুর নিয়মিত বাগানে কাঁচা পাতা তোলার কাজ করেন। ওই তল্লাটেরই অশোক মুন্ডার ভরসা বাগানেরই কাজের আয়। মাতু লাইনের বিচো অসুর মাস খানেক আগে অবসর নিলেও এখনও সুস্থই রয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই বহাল তবিয়তে জীবিত থাকলেও কাগজে কলমে ‘মৃত’ দেখিয়ে কষ্টার্জিত প্রভিডেন্ড ফান্ডের (পিএফ) টাকা দালাল চক্র আত্মসাৎ করে ফেলেছে বলে হইচই শুরু হয়েছে। এই কাহিনী শুধু তিনজনের মধ্যেই সীমিত নেই। জীবিতকে মৃত দেখিয়ে তাঁদের পিএফের টাকা আত্মসাৎ করা বা প্রচেষ্টার এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে এমন হাফ ডজন রোমহর্ষক ঘটনা সামনে এসেছে নাগরাকাটার প্রত্যন্ত ক্যারণ চা বাগান থেকে।
ডুয়ার্সের বাগানে এই ধরনের জালিয়াত সিন্ডিকেট যে কতটা সক্রিয়, তা আরও একবার প্রমাণিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে। সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ঠকিয়ে পিএফের টাকা আত্মসাতের অভিযোগকে ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রামের একাধিক চা বাগানও।
জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কার্যালয়ের সহকারি পিএফ কমিশনার শৈলেন্দ্র কুমার ঝা বলেন, ‘ক্যারণের বিষয়টিকে নিয়ে এখনও বাগান পরিচালক কিংবা শ্রমিকদের কাছ থেকে কোনও অভিযোগ মেলেনি। তা পাওয়ার পরই যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’ ক্যারণের ম্যানেজার আনন্দ শুক্লার বক্তব্য, ‘বেশি দিন হয়নি আমি এই বাগানের দায়িত্ব নিয়েছি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একটি এমন ঘটনা নজরে আসতেই পিএফ দপ্তরকে জানানো হয়েছিল। এখন আরও যে সমস্ত অভিযোগ সামনে আসছে সমস্ত কিছু জানিয়ে পুলিশের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে।’
তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, ‘এখানে পিএফের একটি বড়সড়ো চক্র জাঁকিয়ে বসেছে গোপন সূত্রে এমন খবর পেয়ে এসে যা দেখলাম তাতে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে। আসল নাকি নকল তা জানা নেই। তবে মৃত্যুর শংসাপত্র সহ জীবিতদের পিএফের ক্লেইম জমা করা হচ্ছে। একাধিক ব্যক্তির টাকা উঠেও গিয়েছে। দ্রুত এর কোনও হেস্তনেস্ত না হলে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দুস্থ শ্রমিকদের এভাবে ঠকানো কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’