বক্সিরহাট: কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের(কেএলও) ডেরায় অস্ত্রচালনা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোজিৎ বর্মনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। বুধবার অসমের দিসপুর এলাকা থেকে মনোজিৎকে গ্রেপ্তার করেছে বক্সিরহাট থানার পুলিশ। বক্সিরহাট থানার অন্তর্গত মহিষকুচি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের টাকোয়ামারি এলাকার বাসিন্দা মনোজিৎ।
বুধবার তুফানগঞ্জ মহকুমা দায়রা আদালতে তোলা হয়েছে তাকে। সরকারি আইনজীবী সঞ্জয় বর্মন জানান, বোমা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত থাকায় কেএলও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোজিৎ বর্মনকে আজ আদালতে তোলা হয়েছে। বিচারক তাঁকে দশ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন(কেএলও-র) নাম করে মোটা অংকের টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েচিল নজিরান দেওতিখাতা এলাকার বাসিন্দা বিনয় দাস নামে এক ব্যবসায়ীকে। ওই ঘটনায় জড়িত রয়েছে কিনা সে সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গত বছর নভেম্বর মাসে মহিষকুচি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের টাকোয়ামারি এলাকায় একটি বাঁশঝাড় থেকে কালোরঙের ক্যারিব্যাগে অদ্ভুত আকৃতির দুটি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সিআইডির বম্ব স্কোয়াড ঘটনাস্থলে পৌঁছে বোমা দুটি নিষ্ক্রিয় করে। বোমা তৈরির উপাদান সংগ্রহ করে পুলিশ। ওই ঘটনার পরের দিনই বোমা দুটি তাঁদের বলে দাবি করে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান আহ্বায়ক ডি.এল.কোচ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রকাশ করা হয়েছিল।
সেই চিঠিতে লেখা ছিল, ১৯৯৩ সাল থেকে কামতাপুর এবং ওই অঞ্চলকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ চালাচ্ছে কেএলও। তাই অনুদান হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা দাবি করা হয়। কেএলও মুক্তি সংগ্রামে আর্থিক সহযোগিতা না করলে উত্তরবঙ্গের সেই সমস্ত ব্যবসায়িক গ্রুপ ও ব্যক্তিদের ওপর বোমা হামলা চালানো হবে। পরিত্যক্ত অবস্থায় বোমা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সেসময় অজানা কেএলও-র বিরুদ্ধে ভারতীয় বিস্ফোরক আইনে স্বয়ংক্রিয় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করছিল পুলিশ।
ঘটনাক্রমে, সেই সময় কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন(কেএলও-র)নাম করে মোটা অংকের টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল বক্সিরহাট থানার অন্তর্গত নজিরান দেওতিখাতা এলাকার বাসিন্দা বিনয় দাস নামে এক ব্যবসায়ীকে। সেই সঙ্গে কেএলও-র তরফে হুমকি চিঠি পাঠিয়ে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলায় একাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ২০২৩ সালে অরুণাচল প্রদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের গোপন ডেরায় অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিল মনোজিৎ। পরে মনোজিতের ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে পুলিশ। তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার হয় ওই বোমা দুটি। ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল সে। পরে মনোজিতের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর শুরু করে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার দুত্যিমান ভট্টাচার্য জানান, অসমের দিসপুর এলাকা থেকে মনোজিৎকে গ্রেপ্তার করেছে বক্সিরহাট থানার পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ইতিপূর্বে এসটিএফ-কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র কেনাই এদের মূল লক্ষ্য। মনোজিতের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের গ্রুপের অনেকেই সক্রিয় রয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে সেই সক্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর।