শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: রাজ্যের পুরোনো যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলির মধ্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (North Bengal University) অন্যতম। অথচ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিকে হরি ঘোষের গোয়াল বললেও কম বলা হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য (Vice Chancellor) সিএম রবীন্দ্রন। তিনি কবে আসবেন, জানেন না কেউই। আদৌ আসবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা।
২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে নেই ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার (University Registrar) স্বপনকুমার রক্ষিত। ২১ ফেব্রুয়ারি দুই ডিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ফলে শিক্ষা সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখার কেউ নেই। রেজিস্ট্রার না আসায় মঙ্গলবার পতাকা লাগিয়ে তাঁর দপ্তর বন্ধ করে দিয়েছে সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি। শিক্ষক থেকে আধিকারিকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর গত বাষট্টি বছরে এমন পরিস্থিতি হয়নি।
উপাচার্য না আসায় গবেষণা সংক্রান্ত সমস্ত প্রশাসনিক কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। গবেষণাপত্র জমা পড়লেও উপাচার্যের স্বাক্ষর না পাওয়ায় মাসতিনেক ধরে সব থমকে গিয়েছে। অনেকেই এখনও পিএইচডি’র রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেননি। স্কলারশিপের কাজও আটকে। সামান্য কাজের জন্যও রেজিস্ট্রারের দপ্তরে মাসের পর মাস চক্কর কাটতে হচ্ছে পড়ুয়াদের।
এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া দূর, বরং আরও জটিল হতে চলেছে। কারণ ১৯ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও ফিন্যান্স অফিসারের ছয় মাসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ৩০ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্রনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৫ অক্টোবর তিনি দায়িত্ব নেন। সেই হিসাবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তাঁরও মেয়াদ শেষ। নতুন করে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে কার্যত রাজ্যপালের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
এরপর? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, ‘স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ হলেই কোনও সমস্যা থাকবে না। আমরা চাইলেও কেন্দ্র চাইছে না। আমরা সমস্যার কথা বারবার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছি। আদালত নির্দেশ না দিলে আমরা কিছু করতে পারছি না।’ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় টিচার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রঞ্জন রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘এমন পরিস্থিতি আগে কোনওদিনও হয়নি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষা সংক্রান্ত কাজকর্ম পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা জরুরি।’
দাবিদাওয়া না মেটানো হলে বুধবার থেকে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতি। সংগঠনের নেতা রণজিৎ রায়ের বক্তব্য, ‘কায়দা করে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে সদুত্তর না পেলে প্রশাসনিক দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’ ক্যাম্পাস ইনচার্জ প্রণব ঘোষ জানান, এই অচলাবস্থার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হচ্ছে।’