উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: শাস্ত্রীয় সংগীতে নক্ষত্রপতন। মঙ্গলবার প্রয়াত হন ওস্তাদ রাশিদ খান (Rashid Khan)। ৫৫ বছর বয়সেই থেমে গেল তাঁর সুরেলা সফর। বুধবার রবীন্দ্র সদনে (Rabindra sadan) রাশিদ খানকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Cm Mamata Banerjee) উপস্থিতিতে গান স্যালুট দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, উত্তর প্রদেশে সমাধিস্থ করা হবে তাঁর নশ্বর দেহ।
কলকাতার (Kolkata) একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সংগীতশিল্পী। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Cm Mamata Banerjee), পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে শিল্পীর মৃত্যুর ঘোষণা করেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সংগীতশিল্পীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পীর শেষকৃত্যের প্রসঙ্গে বলতে বলতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমি ভাবতে পারছি না রাশিদ আর নেই। খুব খারাপ লাগছে।’ হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim), ইন্দ্রনীল সেন (Indranil Sen) সহ আরও অনেকে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এদিন শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তার আগে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন শিল্পীর অনুরাগীরা। সেইমতোই রবীন্দ্র সদনে শিল্পীর মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পূর্ব নির্ধারিত সময়মতো দুপুর ১টা নাগাদ রবীন্দ্র সদনেই গান স্যালুট জানানো হয় শিল্পীকে।
ওস্তাদ রশিদ খানের জন্ম উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বদায়ুনে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা সংগীত পরিবারে। উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খানের ভাইপো তিনি। কাকাই প্রথম শিল্পীকে মুম্বই নিয়ে যান। সেখানেই গানের তালিম নেন। এরপর উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছে বাড়িতেই গানের তালিম নেন। শাস্ত্রীয় সংগীতে তিনি মহীরুহ। একাধিক ছবির গান গেয়েছেন তিনি। ‘যব উই মেট’, ‘কিসনা’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘রাজ ৩’-র মতো বলিউড ছবির পাশাপাশি ‘মিতিন মাসি’, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘কাদম্বরী’-র মতো বাংলা ছবিতেও রয়েছে তাঁর গান। প্রথমবার কনসার্টে গেয়ে যখন রাশিদ খান সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১ বছর। এরপর ১৪ বছর বয়সে কলকাতায় আসেন রাশিদ খান। আইটিসি সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে শুরু হয় সঙ্গীতের পাঠ। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য মুদ্ধ করেছিল দেশকে। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।
প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন রাশিদ খান। গত কয়েক বছর ধরেই ক্যানসারে ভুগছেন এই শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী। শুরুতে মুম্বইয়ের (Mumbai) একটি নামী ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পরে সেখান থেকে কলকাতায় আসেন। এরপর মাঝে মধ্যেই অসুস্থতার কথা শোনা যেত তাঁর। সুস্থ হচ্ছিলেন ধীরে ধীরে। কিন্তু এরপর ব্রেন স্ট্রোক হওয়ায়, কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। গতকাল তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও শেষরক্ষা হল না। ৫৫ বছর বয়সেই জীবনের সফর শেষ করলেন ওস্তাদ রাশিদ খান।