প্রসেনজিৎ সাহা,দিনহাটা: সাংসদের নাম কী? জানে না শ্রীলঙ্কা। ভারতের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা নয়, এ আমার-আপনার ঘরের কাছে দিনহাটা মহকুমার একটি গ্রাম। চারপাশে সিঙ্গিমারি নদী গ্রামটিকে কার্যত দ্বীপ বানিয়ে রেখেছে। নদীর চর ও বাঁশের মাচায় নদী পার হয়ে গ্রামে যাওয়ার একমাত্র পথ। ধুলোভরা রাস্তায় গাড়ি দূরের কথা, বাইক নিয়ে যেতে প্রাণান্তকর দশা হয়।
গ্রামে ঢোকার মুখে বাড়ির দাওয়ায় বসেছিলেন আসেকজুন বেওয়া। ভোটের আগে গিয়েছি। তাই সবাইকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, আপনাদের সাংসদের নাম কী? অনেক ভেবেও সাংসদের নাম বলতে পারলেন না আসেকজুন। শুধু তিনি নন, গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারই সাংসদের নাম জানা নেই। চেনেনও না। দেখেননি কোনওদিন। দেখবেন কী করে, কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের কখনও পা পড়েনি দিনহাটা শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটিতে।
শ্রীলঙ্কা বড় শৌলমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। শৌলমারির মদনাকুড়া ঘাট হয়ে যেতে হয়। সিঙ্গিমারি নদীর ওপারে পৌঁছে মুদি দোকানে জিজ্ঞাসা করলে শ্রীলঙ্কা যাওয়ার পথের হদিস মেলে। সামান্য কয়েকজন সাংসদের নাম জানেন বললেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাঁরা দেখা পাননি সাংসদের। সাংসদ আবার দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অথচ তাঁর নির্বাচনি কেন্দ্রের এই গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। নদীভাঙন, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। গত কয়েক বছরে নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে গ্রামছাড়া প্রায় দুশো পরিবার।
দিনহাটায় ফিরে বিজেপির অন্যতম জেলা সম্পাদক অজয় রায়কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন, ‘কথাটা ঠিক নয়। সাংসদ যোগাযোগ রাখেন। তবে কোথাও ব্যতিক্রম হতে পারে। আমরা ভাঙন সমস্যা নিয়ে সচেতন।’ দিনহাটার তৃণমূল নেতা বিশু ধর আবার অভিযোগ করেন, বিজেপি নেতারা এরকমই। তাঁর কথায়, ‘ভোটে জিতে অদৃশ্য হওয়াই বিজেপি নেতাদের বরাবরের ধর্ম।’
গ্রামটিতে এখন প্রায় তিনশো পরিবারের বাস। মূল রাস্তা পাকা নয় বলে যাতায়াতে ভরসা মোষের গাড়ি কিংবা ট্রলি। স্থানীয় তরুণ মনিরুল মিয়াঁ নদী দেখিয়ে বললেন, ‘সিঙ্গিমারির যে শান্ত রূপ দেখছেন, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তা থাকে না। তখন ভয়ংকর চেহারা নেয়। তখন আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে যাই। ঠাঁই হয় ফ্লাড শেলটারে।’ গ্রামটিতে পরিস্রুত পানীয় জলের সরকারি জোগান নেই, বিদ্যুৎও নেই গ্রামের সব জায়গায়।
গতবছর যাঁরা নদীভাঙনে জমি হারিয়েছেন, আসন্ন বর্ষায় তাঁরা বাকি জমি হারানোর অপেক্ষায় আছেন। মনিরুলের গলায় তীব্র ক্ষোভ, ‘শুনেছি সাংসদ ভাঙন রোধে কাজ করবার ক্ষমতা রাখেন। তাহলে গত পাঁচ বছরে কেন ব্যবস্থা নেননি। বিচ্ছিন্ন গ্রাম বলেই কী এই বঞ্চনা?’ এসব প্রশ্ন বা ক্ষোভের উত্তর দেওয়ার কেউ নেই গ্রামে।