অনুপ সাহা, বাগ্রাকোট: মা-কে ফিরে পাওয়ার আনন্দে দু’চোখে জল ধরে রাখতে পারেনি ১৪ বছরের সরস্বতী। দশ বছর আগে একমাত্র শিশুকন্যা সরস্বতীকে নিজের মায়ের কাছে রেখে কাজের খোঁজে গ্রামেরই এক মহিলার হাত ধরে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন বাগ্রাকোট চা বাগানের মহিলা জুলি সারকি। সেই ছোট্ট বয়স থেকেই দিদার মুখে শুনেছে মায়ের কথা। একটু বড় হতেই বুঝতে পারে মা হয়তো আর কোনওদিন ফিরে আসবে না।
এদিকে মা জুলি দিল্লি যাওয়ার আগেই সরস্বতীর বাবাও অন্য এক মহিলার সঙ্গে ঘর বেঁধে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই থেকে দিদার কাছেই বড় হয়ে ওঠা বর্তমানে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সরস্বতীর। মা-কে পেয়ে সরস্বতী বলে, ভাবিনি মা-কে কোনওদিন ফিরে পাব। আজকের দিন আমার কাছে সেরা।
ডুয়ার্স এক্সপ্রেস মেইল’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে শনিবার দুপুরে মা-কে নতুন করে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সরস্বতী। একসময় জুলিকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন সীতা সারকি। এদিন তাঁরও চোখে জল। জুলির বাড়ি ফিরে আসার খবর জানতে পেরে পাড়াপ্রতিবেশী তো বটেই মাউন্ট অলিভ স্কুল লাইনের দু’কামরার ঘরে ভিড় জমিয়েছেন বাগ্রাকোট গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য অজিত খাড়কা, স্থানীয় ভাস্কর্য শিল্পী আমির সুনদাস।
দিল্লিতে থাকাকালীন গত দশ বছরে বহু ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে গিয়েছে জুলির জীবনে। মানসিক অসুস্থতার কারণে গৃহপরিচারিকার কাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে দিল্লি ও নয়ডার ফুটপাথে দিনের পর দিন রাত কাটাতে হয়েছে তাঁকে। আট বছর আগে এমনই এক রাতে ফুটপাথে ঘুরে বেড়াতে দেখে নয়ডা পুলিশের নজরে পড়ে যান জুলি। পুলিশের উদ্যোগে তাঁর ঠাঁই হয় সেখানকার আশ্রয় শেলটার হোমে। সেইসময় নিজের বাড়ি, মা ও মেয়ের কথা সব ভুলে গিয়ে হোমের জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছিলেন জুলি। এরই মাঝে নয়ডা পুলিশের তরফে ডুয়ার্সের নারী ও শিশু পাচার বিরোধী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার রাজু নেপালির কাছে জুলির একটি ফোটো পাঠিয়ে মিনা মোড় বলে একটি জায়গার নাম উল্লেখ করা হয়। মিনা মোড় নামটি শুনেই অভিজ্ঞ রাজুর বুঝতে অসুবিধা হয়নি জুলি সম্ভবত বাগ্রাকোটের মেয়ে। পরিচিতদের মাধ্যমে খোঁজখবর শুরু করতেই জুলির মা সীতা সারকির হদিস পান রাজু। তারপর ভিডিও কলে মা-মেয়ের কথাবার্তায় দুজনেই দুজনকে চিনতে পারেন। সেই থেকে প্রতীক্ষার শুরু। অবশেষে সমস্ত নিয়মকানুন মেনে এদিন জুলিকে তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। জুলির ছোট্ট প্রতিক্রিয়া, মেয়েকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। সেটা বাস্তবায়িত হল।