প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ শনিবার কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন সিদ্দারামাইয়া৷ এই নিয়ে দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন তিনি। বিস্তর চুলচেরা মাপজোখ শেষে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমারকে পিছনে ফেলে কর্ণাটকের কুর্সি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ও রাহুল ঘনিষ্ঠ সিদ্দারামাইয়া।
বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে শনিবার দুপুরে হবে সিদ্দারামাইয়ার বর্ণাঢ্য রাজ্যাভিষেক৷ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজে ফোন করেছিলেন সিদ্দারামাইয়া, শুক্রবার টুইটে জানান তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সিদ্দারামাইয়াকে ফোনেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷ মমতা অবশ্য নিজে সিদ্দারামাইয়ার শপথে থাকতে না পারার অপারগতা জানানোর পাশাপাশি সৌজন্যতা প্রদর্শন করে তাঁর দলের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাঙ্গালুরুতে পাঠাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার ডেপুটি লিডার কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে, ডেরেক তাঁর টুইটেই জানান একথা৷ নিজের একটি পুরনো প্রতিবেদন প্রকাশ্যে এনে তিনি এও জানান, নির্বাচনের পাঁচ মাস আগেই কর্ণাটকের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ আঁচ করে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধিকে আগাম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন ডেরেক।
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সৌজন্যরক্ষার কৌশল নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় মহলে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে কয়েক দিন আগেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে শর্তসাপেক্ষে কংগ্রেসের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তার পরে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কংগ্রেস হাইকমান্ড৷ এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে যাওয়া সিদ্দারামাইয়াকে দিয়ে ফোনে ব্যাঙ্গালুরুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷
অন্যদিকে পালটা চাল চেলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে যেভাবে লোকসভা ও রাজ্যসভার দুই নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েনকে কর্ণাটক না পাঠিয়ে সিদ্দারামাইয়ার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দলের অন্যতম বর্ষীয়ান নেত্রী ও সাংসদ ড. কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা, তার মধ্যেও প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক কৌশলের আভাস পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এভাবেই তৃণমূল কংগ্রেস নিজের ধার ও ভার বজায় রাখল বলেই মনে করা হচ্ছে পর্যবেক্ষক মহলের তরফে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৩ মে এই ব্যাঙ্গালুরুতেই জেডিএস-কংগ্রেস জোটের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেবারের ঐতিহাসিক সমাবেশে মমতা সহ সোনিয়া ও রাহুল গান্ধির পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বামনেতা সীতারাম ইয়েচুরি, চন্দ্রবাবু নাইডু, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, শরদ পাওয়ার, অজিত সিং সহ ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবিরের তামাম শীর্ষ প্রতিনিধিরা। এর পর বিগত পাঁচ বছরে দেশের রাজনৈতিক পটভূমিকায় এসেছে প্রভূত পরিবর্তন৷ এবার কংগ্রেসের আমন্ত্রিতের তালিকায় থাকছেন এম কে স্টালিন, নীতীশ কুমার, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব, শরদ পাওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা প্রমুখ৷
আমন্ত্রিত পাননি তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, বসপা সুপ্রিমো মায়াবতী এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি৷ বিস্ময় তৈরি হয়েছে বিআরএস এবং আম আদমি পার্টির মত দুটি দলকে নিমন্ত্রণ না করার সিদ্ধান্তে৷