শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ির (Siliguri) সুভাষপল্লিতে এক যুবতীকে শ্লীলতাহানির (Molestation) ঘটনায় শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। একই ঘটনার সূত্রে বৃহস্পতিবারও শহর উত্তাল হল। এবারে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ। অভিযোগ, পেশায় এয়ার হোস্টেস ওই যুবতীকে অভিযোগ দায়ের করতে পুলিশ কোনও সহযোগিতাই করছে না। পাশাপাশি, তারা দায় এড়ানোর চেষ্টাও করছে বলে অভিযোগ। আতঙ্কের জেরে ওই যুবতী এদিনই শহর ছাড়েন। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি শিলিগুড়ি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায়। ডিওয়াইএফআইয়ের ডাবগ্রাম উত্তর লোকাল কমিটির তরফে ডন বসকো মোড়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশ অভিযোগ মানতে চায়নি।
১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলার সিপিএমের মৌসুমি হাজরা বললেন, ‘শিলিগুড়ি থানার আইসির সঙ্গে দেখা করেছিলাম। বুধবার যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি মহিলা থানার আওতায় পড়ে বলে তিনি আমাদের জানান। আসলে এভাবে দায় এড়ানোর চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তকে ধরার কোনও চেষ্টাই চলছে না।’ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ কমিশনার সি সুধাকর মানতে চাননি, ‘ওই যুবতী কী বলেছেন তা আপনারা থানায় গিয়ে শুনুন।’ মেয়র গৌতম দেব অবশ্য ওই যুবতীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, ‘অভিযুক্তকে খুঁজে বের করতেই হবে বলে কমিশনারকে বলেছি। এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নিতেই হবে।’
ঠিক কী হয়েছে? পুলিশ সূত্রে খবর, শ্লীলতাহানির ঘটনার পর ওই যুবতী শিলিগুড়ি মহিলা থানায় গিয়েছিলেন। তিনি যে সেখানে গিয়েছিলেন তা ওই থানার কর্মীরা স্বীকারও করেছেন। যে যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই যুবতী তাকে চেনেন না বলে পুলিশকর্মীদের জানান। তবে শেষপর্যন্ত তিনি আর কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। কেন? ওই যুবতীর বান্ধবীর বক্তব্য, ‘অভিযোগ দায়ের করলে ওকে সমস্যায় পড়তে হবে বলে ওর মনে হয়েছিল।’ কী কারণে এমনটা মনে হল? বান্ধবীর বক্তব্য, ‘হয়তো পুলিশকর্মীদের হাবেভাবেই ওর এমনটা মনে হয়েছিল। আর তাই শেষপর্যন্ত অভিযোগ দায়ের না করেই ও ফিরে আসে।’ পুলিশ অবশ্য অসহযোগিতার বিষয়টি মানতে চায়নি। তাদের দাবি, অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগ নিশ্চিতভাবে নেওয়া হত। থানায় আসার পর ওই যুবতীকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে সুভাষপল্লি এলাকার অনেকটা জুড়ে ঘোরানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতেই এমনটা করা হয় বলে তারা জানায়।
পুলিশ এমনটা দাবি করলেও তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ অবশ্য কমছে না। ওই যুবতী নিজে অভিযোগ দায়ের না করলেও পুলিশ কেন এই ঘটনায় সুয়োমোটো মামলা দায়ের করল না সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। এদিকে, অভিযুক্ত যুবক এখনও এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ওই যুবকের মতো আরও অনেকের মধ্যে এভাবে দুষ্কর্ম করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানোর প্রবণতা বাড়বে বলেই বাসিন্দাদের দাবি। উলটে পুলিশ গড়িমসি করে শহরের ভাবমূর্তি পরিষ্কার দেখানোর চেষ্টা করছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। তাই বুধবারের ঘটনায় দ্রুত কড়া পদক্ষেপের দাবিতে শহর সরব হয়েছে।