শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: সময়ের সঙ্গে রূপ বদলায় ঘটনার পটভূমি। সে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যাই হোক না কেন। মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনাও সময়ের সঙ্গে রূপ বদলায়। সাল ১৯৯০। বামফ্রন্ট আমল। মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু (Jyoti Basu)। ঘটল বানতলা ধর্ষণ কাণ্ড। মাঝে ৩২ বছরের ফারাক। সাল ২০২২। মা-মাটি-মানুষের জমানা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার রাজপথে ঘটল মূক ও বধির মহিলার উপর নারকীয় অত্যাচার, ধর্ষণ। দুই ঘটনাকে এক সুতোয় গাঁথলেন শিলিগুড়ির (Siliguri) কিংশুক দে আর সংযুক্তা দেব রায়। তৈরি করলেন পলিটিকাল থ্রিলার- রেড ফাইলস (Political thriller- Red Files)। এই সিনেমা নিয়ে অবশ্য কম নাজেহাল হতে হচ্ছে না তাঁদের।
শুক্রবার ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। তার কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে শিলিগুড়ির সুভাষপল্লির বাসিন্দা কিংশুক বেশ টেনশনে। গলার স্বরে বিপর্যস্ত হওয়ার আভাস। বললেন, ‘ছবি মুক্তির জন্য কলকাতার কোনও সরকারি হল পেলাম না। পেলাম শুধুমাত্র দুটি মাল্টিপ্লেক্স। অথচ সব সিনেমাই হলে জায়গা পাচ্ছে। আসলে, আমার মনে হয়, সরকারের বদল হলেও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা একই রকম রয়েছে।’ এপ্রসঙ্গে সংযুক্তার স্পষ্ট কথা, ‘আমাদের এই সিনেমার মূল উদ্দেশ্য, ফাইলের পাহাড়ে চাপা পড়ে ধুলো মাখা কেসগুলি মানুষের সামনে নিয়ে আসা। সেজন্যই ছবির নাম দেওয়া হয়েছে রেড ফাইলস।’
ছবির বিষয়বস্তু কী? পরিচালনার পাশাপাশি প্রোডাকশন ডিজাইনের দায়িত্বে থাকা কিংশুক বলছিলেন, ‘২০২২ সালে এক মূক ও বধির মহিলার ধর্ষণের ঘটনায় তিন তদন্তকারী পুলিশকর্তাকে দেখানো হয়েছে। ওই তদন্তের সময় ১৯৯০ সালের বানতলা ধর্ষণ কাণ্ডকে স্মরণ করানো হয়েছে। উভয় ঘটনাকে এক সুতোয় গেঁথে মাইক্রোস্কোপের লেন্সের নীচে ফলে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে, আমরা মাঝে ৩২টা বছর পার করে এলেও এক জায়গায় পড়ে রয়েছি। আমরা কতটা প্রতিবাদী হয়েছি, সরকার কতটা গঠনমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, সবটাই দেখানো হয়েছে।’
ছবিটির অভিনয়ে রয়েছেন কিঞ্জল নন্দা, মুমতাজ সরকার, দেবপ্রসাদ হালদার, অভিরূপ চৌধুরী, শ্যামল চক্রবর্তী প্রমুখ। ছবির প্রেক্ষাপটে যেহেতু দুই সত্য ঘটনা, তাই রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তথ্য জোগাড়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান সংযুক্তা। ছবিটির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ও কস্টিউম ডিজাইনারের দায়িত্ব সামলেছেন শিলিগুড়ির অরবিন্দপল্লিতে বেড়ে ওঠা সংযুক্তা।
তিনি বলেন, ‘বানতলা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যের জন্য বর্তমান কতিপয় নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন দল বদলে এখন তৃণমূলে আছেন। কিন্তু দল বদলালেও এনিয়ে কিছু বলতে চাননি।’ ন্যাশনাল লাইব্রেরি, হাইকোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে বলে সংযুক্তা, কিংশুকের দাবি।
প্রসঙ্গত, অতীতে বহু সিনেমা, মেগা সিরিয়াল পরিচলনা করেছেন কিংশুক। সংযুক্তার এবারই সিনেমায় হাতেখড়ি। তাঁর কথায়, ‘কিংশুকের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব। মাঝে কলকাতায় যাই। কুড়ি বছর পর ফের দেখা। তারপরই যৌথভাবে রেড ফাইলস তৈরির সিদ্ধান্ত।’