ঘৃণার আগুন যে কত তীব্র হতে পারে তা ভাবতেও পারেননি তিনি। বুঝতে পেরেছিলেন বন্ধ গাড়িতে দুই শিশুপুত্র নিয়ে জীবন্ত দগ্ধ হওয়ার সময়। কেউ তাঁকে বাঁচাতে আসেনি। উলটে যে জটলাটা তাঁর গাড়িতে আগুন লাগিয়েছিল, পৈচাশিক উল্লাসে তারা পিটিয়ে-খুঁচিয়ে তাদের বেরোতে দেয়নি ওই জ্বলন্ত গাড়ি থেকে।
পাক্কা পঁচিশ বছর আগেকার কথা। ১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি। ওডিশার ময়ূরভঞ্জে ঠিক এভাবেই মৃত্যু হয়েছিল যাজক, সেবাব্রতী গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টেইনসের। ২২ জানুয়ারি স্টেইনস গিয়েছিলেন মনোহরপুর এলাকার খ্রিস্টানদের বার্ষিক জমায়েতে। ময়ূরভঞ্জ আর কেওঞ্ঝরের সীমানায় আদিবাসীদের গ্রামে ছিল তাঁদের ক্যাম্প। ছোট দুই ছেলে ১০ বছরের ফিলিপ আর ৭ বছরের টিমোথি স্কুলের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল তখন। তারাই মনোহরপুরের জঙ্গলে রাত কাটানোর বায়না ধরে। বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা। তাই স্টেশন ওয়াগন ভ্যানের মধ্যেই শুয়েছিল তারা। সঙ্গে আসেননি স্ত্রী আর মেয়ে। তাঁরা ছিলেন বারিপদায়। রাত ঘন হতেই জনা পঞ্চাশেক লোক কুড়ুল আর লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ভ্যানের উপর। তখন বাবা আর দুই ছেলে গভীর ঘুমে। ওই ভ্যানে এরপর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গাড়ির সঙ্গে জ্বলতে থাকেন তিনজন। তাঁরা বাধা দিতে চেষ্টা করেন। বাইরে বেরোতে চান। কিন্তু ওই উন্মত্ত জনতা তাঁদের বেরোতে দেয়নি।
পঁচিশ বছর আগে সেই দিনটাও ছিল ২২ জানুয়ারি। অস্ট্রেলিয়ার ২৪ বছরের যুবক স্টেইনস ভারতে এসে যোগ দেন ইভাঞ্জেলিকাল মিশনারি লেপ্রসি হোমের কর্মী হিসেবে, ১৯৬৫ সালে। কুষ্ঠরোগীদের সেবার জন্য। ওডিশার বারিপদায়। শয়ে-শয়ে কুষ্ঠরোগী চিকিৎসা পেতেন সেখানে গিয়ে। আরোগ্যের পর ১১ কিলোমিটার দূরে রাজবাসায় পুনর্বাসন হত রোগীদের। তাঁরা সুস্থ জীবনে ফিরে যেতেন।
এই নির্মম হত্যায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল গোটা দুনিয়া। সারা বিশ্বের প্রবল নিন্দার মাঝে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া সাজা দেওয়া হবে। চার্চের প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তরের অভিযোগ সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত দারা সিং ছিল কট্টর হিন্দুদের চোখে হিরো। তারই প্ররোচনায় ধর্মান্তরের বদলা নিতে স্টেইনসের গাড়িতে হামলা করা হয়েছিল। হামলাকারীরা বজরং দলের। তাদের কথায়, খ্রিস্টান মিশনারিরা আদিবাসীদের সংস্কৃতি নষ্ট করছে। তাদের শূকরের মাংস খেতে শেখাচ্ছে, মহিলাদের ব্রেসিয়ার পরাচ্ছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে। তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসানো হয়েছিল। তারা জোর করে ধর্মান্তরের একটাও প্রমাণ পায়নি।
দারা সিংয়ের ফাঁসি মকুব হয়ে যাবজ্জীবন হয়েছে। ধরা পড়া ১১ জন প্রমাণের অভাবে খালাস পেয়ে যায়। ছাড়া পান প্রতাপ সারঙ্গীও। এই প্রতাপ সেইসময় ছিলেন বজরং দলের মাথা। প্রতাপ সারঙ্গী মোদির মন্ত্রীসভায় চারটে মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ওডিশার বিজেপির বিধায়কও ছিলেন। দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির তিনি সদস্যও বটে।
তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী গ্ল্যাডিস গ্রাহামের স্মৃতিতে ১৫ বেডের একটি হাসপাতাল বানান। অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাওয়ার আগে স্বামীর কাজ চালিয়ে যান তিনি। তাঁকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয় ভারত সরকারের তরফে। আজও প্রতি ২২ জানুয়ারি রাতে মনোহরপুরের হতদরিদ্র সাঁওতাল, হো, মুন্ডারা জড়ো হয়ে প্রার্থনা করেন স্টেইনসের জন্য, মানুষের মনুষ্যত্বের জন্য।
যে জনতা পঁচিশ বছর আগে পুড়িয়ে মেরেছে গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টেইনসকে তাদের উল্লাসের স্লোগান ছিল, জয় শ্রীরাম। গতকাল, ২২ জানুয়ারি হাজার হাজার কণ্ঠে যে জয়ধ্বনি উঠেছিল তার সঙ্গে কোথাও তার কোনও মিল ছিল কি?
শিলিগুড়ি: মিরিক লেকে (Mirik Lake) ভেসে উঠছে মৃত মাছ (Dead Fish)। গত দু’দিন ধরে চলা…
ডালখোলাঃ গৃহকর্তার অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে মারধোর করে আড়াই লক্ষ টাকা ও প্রচুর পরিমাণে…
কালিয়াগঞ্জ: তীব্র গরমে জমির মাটি ফাটার জোগাড়। কমছে জলস্তর। পুকুরগুলো জলশূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে কালিয়াগঞ্জের(Kaliaganj)…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: কাজাখস্তানের (Kazakhstan) প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল…
বালুরঘাট: গত দু'সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সারা রাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে।…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ স্কুলের শিক্ষিকা ও প্রিন্সিপালের মধ্যে চুলোচুলি। দুজনেই চুলের মুঠি ধরে একে…
This website uses cookies.