উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ১৫ বছর আগে সিঙ্গুর থেকে বিদায় করা হয়েছে টাটাকে। সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ার পরিকল্পনা ছিল টাটা গোষ্ঠীর। সোমবার আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল আদালত রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিপূরণবাবদ টাটা মোটরসকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। আর এই বিষয়টি নিয়েই মুখ খুলেছেন, সিঙ্গুরের ‘মাস্টারমশাই’ তথা সিঙ্গুর থেকে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘‘টাটা বিদায়ে শুধু সিঙ্গুরের নয়, পুরো রাজ্যের ক্ষতি হয়েছে। তবে এর দায় একা মমতার নয়।’’
এখন সিঙ্গুরের কৃষকদের আক্ষেপ, না হল চাষ, না হল কারখানা। আন্দোলন করে সিঙ্গুর থেকে একপ্রকার তাড়ানো হল টাটাকে। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি ও তার অনুসারী শিল্প গড়তে টাটাগোষ্ঠীকে জমি দিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। সিঙ্গুরের ৫টি মৌজার মোট ৯৯৭ একর জমি চিহ্নিত করে অধিগ্রহণ করা হয়। সেই মতো রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে টাটার চুক্তি হয়। সেই জমিতে কাজ শুরু হতেই সিঙ্গুরের অধিগৃহীত জমিতে আন্দোলন শুরু করেন অনিচ্ছুক চাষিরা। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের দাবি, তিনফসলী উর্বর জমি এ ভাবে জোর করে নিয়ে নেওয়া যাবে না। কারখানার কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেলেও আন্দোলনের চাপে পিছু হটতে হয় টাটাকে। শেষে ২০০৮ সালে সিঙ্গুর থেকে কারখানা গুটিয়ে গুজরাটের সানন্দে চলে যায় টাটা মোটরস।
এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবেন। বামেরা জানিয়েছিল, জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল। সেই মামলা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে যায়। অবশেষে ২০১৬ সালে শীর্ষ আদালত রায় দেয়, কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই মমতা সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেন। সোমবার অরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল নির্দেশে জানিয়েছে, টাটারা সিঙ্গুরে কারখানা গড়তে যে টাকা লগ্নি করেছিল, তা সুদসমেত ক্ষতিপূরণ হিসাবে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে, সিঙ্গুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তথা সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির তৎকালীন সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘টাটাদের সিঙ্গুর থেকে চলে যাওয়ায় শুধু সিঙ্গুরের ক্ষতি হয়নি। সমগ্র রাজ্যের ক্ষতি হয়েছে। টাটা চলে যাওয়ার পর রাজ্যে আর কোনও শিল্প আসেনি। তবে ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে, তাতে খেসারত দিতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও ওই দায় এই সরকারের ছিল না। পূর্বতন বাম সরকারের কাজের খেসারত এই সরকারের উপরে চাপানো হয়েছে।’’
ভুবন বাগুই নামে সিঙ্গুরের এক জমি আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘আমরা রাজনীতির শিকার। আগে বাম সরকার জমি নিল। পরে তৃণমূল সরকার জমি ফেরত দিল। কিন্তু সেই জমি রেজিস্ট্রি করা যাচ্ছে না। বেচাকেনা হচ্ছে না। চাষও ভাল হয় না।’’ আরও এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘মাঠের দু’হাজার বিঘা মতো জমি এখনও চাষ করা যায় না। হাজার বিঘায় চাষ হচ্ছে।’’